Wednesday, July 9, 2025

পানিতে ফেলে যমজ মেয়েকে হত্যা করেন মা

আরও পড়ুন

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় বিলের পানি থেকে পাঁচ মাস বয়সী যমজ দুই বোনের মরদেহ উদ্ধার করে তার স্বজনরা। গত সোমবারের এই ঘটনার পর শিশু দুটির হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয় তাদের বাবা-মাকে। সন্তান হত্যার অভিযোগে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে দোষারোপ করছিলেন। তবে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, লামিয়া ও সামিয়া নামে যমজ ওই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন তাদের জন্মদাত্রী মা শান্তা বেগম (২২)।

বুধবার (০৯ জুলাই) এ ঘটনায় আদালতে জবানবন্দি দেন ঘাতক মা।

জবানবন্দিতে ঘাতক মা বলেন, আমার নাম শান্তা বেগম। মো. সোহাগ শেখ এবং আমার প্রায় ২ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে আমি যখন প্রেগন্যান্ট হই, এরপর থেকে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। সিজারে আমার যমজ মেয়ে হওয়ার পর থেকে আমি আমার বাবার বাড়িতে থাকি। বাচ্চা একটু বড় হওয়ার আগ পর্যন্ত বাচ্চাসহ আমার মা আমাকে আমার বাবার বাড়িতে থাকতে বলেন। কয়েক দিন আগে আমার স্বামী সোহাগ আমাকে আমার বাবার বাড়ি থেকে আমার স্বামীর বাড়িতে আসতে বলে। এরপর আমি আমার স্বামীকে বলি তাহলে বাজার করে রেখো আমি বাচ্চাসহ আপনার বাড়িতে আসব। স্বামীর বাড়িতে আসার পর থেকে আমার স্বামী বাজার করে না, বাচ্চাদের জন্য দুধ কিনে না। এই নিয়ে আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং আমার স্বামী আমাকে মাঝেমধ্যে মারধর করত। আমি বাচ্চা হওয়ার পর থেকেই অসুস্থ, এছাড়া আমার মাথায় একটু সমস্যাও আছে, আমি হুটহাট রেগে যাই। ঘটনার দিন বিকাল বেলা আমাদের মাঝে ঝগড়াঝাঁটি হয়, আমার স্বামী আমার গায়েও হাত তোলে। আমার স্বামী মাঝেমধ্যে নেশা করে এসে আমাকে মারধর করত। এরপর সন্ধ্যা বেলা আমি আমার স্বামীকে ফোন করে বাচ্চাদের জন্য দুধ আনতে বললে আমার স্বামী আমার সঙ্গে চিল্লাচিল্লি করে এবং বলে তোর মেয়ে তুই কিভাবে পালবি তুই দেখ। এতে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। রাগের মাথায় আমি আমার মেয়ে দুটির মধ্যে প্রথমে ছোট বাচ্চা সামিয়াকে পানির মধ্যে ফেলে দেই, এরপর আমার বড় মেয়ে লামিয়াকে পানির মধ্যে ফেলে দেই। ফেলে দেওয়ার পর আমি চুপচাপ বসে থাকি। এরপর আমি ঘর থেকে বের হয়ে আমার স্বামীর বাড়ির একটু দূরে আমার দুসম্পর্কের এক নানির কাছে বলি আমার স্বামী আমার বাচ্চা দুটিকে পানিতে ফেলে দিছে। আমার স্বামীর উপর রাগ করে আমার স্বামীকে ফাঁসানোর জন্য আমি সবাইকে বলি, আমার স্বামী আমার বাচ্চা দুটিকে পানিতে ফেলে দিয়েছে। পরে অনেকে এসে আমার মেয়ে বাচ্চা দুটিকে মৃত অবস্থায় পানি থেকে উপরে তুলে আনে।

আরও পড়ুনঃ  ধানখেতে মিলল ৩টি ‘রাসেলস ভাইপার’

এর আগে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে বিবন্দী গ্রামের মো. সোহাগের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দয়াহাঁটা মজিদপুর গ্রামের শান্তা আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সোহাগ দিনমজুরের কাজ করতেন। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে বিভিন্ন কারণে শান্তা ও সোহাগের ঝগড়া হতো। পাঁচ মাস আগে এই দম্পতির যমজ মেয়ের জন্ম হয়। যমজ সন্তান জন্মের পর সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। এতে এই দম্পতির মধ্যে ঝগড়া আরও বেড়ে যায়। গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে শান্তা প্রতিবেশীদের জানান, তার মেয়েদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একপর্যায়ে বাড়ির পাশে বিলের পানি থেকে দুই শিশুকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদের শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুনঃ  অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত টিউলিপকে সমর্থন দিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

সোহাগের স্বজনদের অভিযোগ ছিল, সোহাগ বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গ্রামের পাশের বাজারে গিয়েছিলেন। তখন দুই শিশু শান্তার কোলে ছিল। শিশু দুটিকে শান্তাই বিলের পানিতে ফেলে হত্যা করেছেন। তবে একই সুরে পাল্টা অভিযোগ শান্তার স্বজনদেরও। তারা বলেছিলেন, শিশু দুটিকে সোহাগ পানিতে ফেলে বাজারে গিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সালমান রহমান কালবেলাকে বলেন, যে সময়ে শিশু দুটিকে পানিতে ফেলা হয় সেই সময়ের সোহাগের মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে দেখা যায়, সোহাগ তখন স্থানীয় বাজারে ছিলেন। ওই বাজারের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখেও এ কথার সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর বাচ্চা দুটির মাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি দুই শিশুকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

আরও পড়ুনঃ  পিরোজপুরে প্রাইভেটকার খালে পড়ে শিশুসহ নিহত ৮

এসআই বলেন, যমজ বাচ্চা দুটির বাবা মেয়ে সন্তান হওয়ায় অখুশি ছিলেন। এজন্য সন্তানদের খোঁজখবর নিতেন না এবং দেখভাল করতেন না। পারিবারিক কলহ এবং বাচ্চার বাবা সন্তানদের দেখভাল না করার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই মা এই হত্যার ঘটনা ঘটান।

সর্বশেষ সংবাদ