সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার শিশু রিফাত পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে বাড়িতে ফিরেছে। গত বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সে দেশে ফেরে। সৌদি আরব থেকে গ্রামবাসী ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য ২৩ কেজি খেজুর ও জমজমের পানি এনেছে রিফাত। সেগুলো শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মসজিদের মুসল্লিরা জমজমের পানি পেয়ে আবেগে উদ্বেলিত হন। এই গ্রামেই শিশু রিফাতের বাস। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের নিজ হাতে জমজমের পানি বিতরণ করে রিফাত। এছাড়াও সবাইকে তিনটি করে খেজুর দেয় সে। এ সময় মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে জায়নামাজ ও তসবিহ উপহার দেওয়া হয়। পবিত্র নগরী থেকে শিশু রিফাতের আনা এমন উপহার পেয়ে খুশি সকলেই।
ইসলামপুর জামে মসজিদের মোয়াজ্জিম মো. জাফর আহমদ বলেন, আমাদের মহল্লার শিশু রিফাত ওমরাহ হজে গিয়েছিল। সেখান থেকে আমার জন্য হাদিয়া নিয়ে এসেছে জায়নামাজ ও তাসবিহ। আমরা সবাই রিফাতের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে দ্বীনের খাদেম হিসেবে কবুল করেন।
ইসলামপুর জামে মসজিদের ইমাম মো. সামছুল হক বলেন, শিশু রিফাত ফিরে এসেছে। আল্লাহ তার ওমরাহ হজ কবুল করুন। আসার সময় আমার জন্য সে জায়নামাজ ও তাসবিহ নিয়ে এসেছে। এতে খুব ভালো লেগেছে। সোনার মক্কা-মদিনায় যেতে না পারলেও আল্লাহ তায়ালা রিফাতের ওসিলায় ওখানকার জিনিস ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছেন। এজন্য আল্লাহর দরবারে হাজারও শুকরিয়া।
ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা জীবনে কল্পনাও করিনি গ্রামের এতো ছোট কোনো ছেলে সৌদি আরবে যাবে, আমাদের জন্য খেজুর ও জমজমের পানি আনবে। জুমার নামাজের পর তার দেওয়া খেজুর খেয়েছি। আল্লাহ যেন তার মনের আসা পূরণ করেন সেই দোয়া করি।
গ্রামের বাসিন্দা আপ্তর আলী বলেন, রিফাত নিজ হাতে সৌদি আরব থেকে আনা খেজুর ও জমজমের পানি দিয়েছে। অনেক তৃপ্তি সহকারে খেয়েছি। আল্লাহ রিফাতের ওসিলায় পবিত্র নগরীর জমজমের পানি ও খেজুর খাইয়েছেন। অনেক দোয়া করি তার জন্য।
রিফাতের বাবা মো. মুহিবুর রহমান বলেন, চাঁদপুরের সৌদিপ্রবাসী শাহজাহান মিয়া ভাইয়ের সহযোগিতায় আমার ছেলে রিফাতসহ আরও ৫ জন উমরাহ হজ করে এসেছেন। উনার জন্য দোয়া করি। রিফাত যখন মক্কা থেকে মদিনায় যায় তখন আমার আব্বা মারা গেছেন। সে হজে থাকায় দেখতে পারেনি। সেখান থেকেই আমার আব্বার জন্য রিফাত দোয়া করেছে। আল্লাহ যেন তার দোয়া কবুল করেন।
তিনি বলেন, অনেক প্রবাসী ভাই খেজুর, জায়নামাজ ও তাসবিহ পাঠিয়েছেন। সেগুলো আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিতরণ করছি।
রিফাতের শিক্ষক ক্বারি মো. আব্দুল কাদির বলেন, পবিত্র উমরাহ হজে যাওয়ার পর প্রবাসী ভাইয়েরা আদর-আপ্যায়ন করেছেন। সম্মান করেছেন। তাদের জন্য দোয়া করি। ১৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরে এসেছি। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
প্রসঙ্গত, চাঁদপুরের বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী মো. শাহজাহান মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী শিশু রিফাত, তোতা মিয়া, আনোয়ার মিয়া ও মাদরাসার শিক্ষক ক্বারি আব্দুল কদ্দুস তার মা-বাবাসহ মোট ছয়জনকে উমরাহ হজ করিয়েছেন। এতে তার নয় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বর মক্কায় গিয়ে পৌঁছেন তারা। ৮ দিন পবিত্র মক্কায় থেকে ১২ ডিসেম্বর মদিনায় পৌঁছেন তারা। পবিত্র উমরাহ হজের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন রিফাতসহ সকলে।