Saturday, January 11, 2025

মুক্তিযুদ্ধের সময় তোফাজ্জেলের বয়স ছিল ৯ বছর

আরও পড়ুন

বরগুনার আমতলীতে সেনাবাহিনীর চাকরি ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদের তথ্য গোপন করে তোফাজ্জেল হোসেন নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে গেজেটভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম রফিকুল ইসলাম।

তোফাজ্জেল হোসেন আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কালিবাড়ী এলাকার মৌলভী আয়নুদ্দিন কাজীর ছেলে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম রফিকুল ইসলামের অভিযোগ, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তোফাজ্জেল হোসেন ছিল মাত্র ৯ বছর বয়সী প্রাথমিকে পড়া একজন শিশু। ২০০৫ সালে তোফাজ্জলের স্ত্রীর ভাই সাবেক উপজেলা কমান্ডার একেএম সামসুদ্দিন শানু প্রভাব খাটিয়ে তাকে অনৈতিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত করতে যাচাই-বাছাই থেকে শুরু করে পরবর্তী সব কার্যক্রমে সহযোগিতা করেছেন। এসএসসি পাসের সনদ অনুসারে ১৯৬২ সালের ২ এপ্রিল জন্ম নেওয়া তোফাজ্জেল হোসেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৮ বছর ১১ মাস ২৫ দিন বয়সী প্রাথমিকের ছাত্র ছিলেন। এসএসসি পাসের সনদে সেনাবাহিনীতে চাকরি করা তোফাজ্জেল হোসেন ২০০৫ সালে অবসরে যান।

আরও পড়ুনঃ  ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বামীকে ৯ টুকরো করলেন স্ত্রী

২০০৫ সালে আমতলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা তোফাজ্জেল হোসেনের স্ত্রীর বড় ভাই একেএম শামসুদ্দিন শানু প্রভাব খাটিয়ে ও কারসাজির মাধ্যমে ৮ম শ্রেণি পাসের শিক্ষা যোগ্যতার সনদ দেখিয়ে তোফাজ্জেল হোসেনকে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করেন। (গেজেট নং-৪৭০)। গেজেটের তথ্যানুসারে তোফাজ্জেল ২০০৯ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাপ্রাপ্ত হয়ে ১৫ বছর যাবৎ অনৈতিভাবে সম্মানী ভাতাসহ রাষ্ট্রীয় অন্যান্য সুবিধা ভোগ করে আসছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম রফিকুল ইসলাম আরও অভিযোগ করে বলেন, এসএসসি পরীক্ষায়ে পাস থাকা সত্ত্বেও তিনি কীভাবে অষ্টম শ্রেণি পাস দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। এ ছাড়া ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসানের স্বাক্ষর জাল করে তোফাজ্জেল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ তৈরি করেছেন।

আরও পড়ুনঃ  পটুয়াখালীতে ছাত্রদল নেতার গাড়িতে আগুন

চুনাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুব উল আলমের স্বাক্ষরিত এক প্রত্যয়নপত্রে দেখা যায়, তোফাজ্জেল হোসেন ১৯৭৮ সালে আমতলী উপজেলার চুনাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তৃতীয় বিভাগে কৃতকার্য হন। তার এসএসসি পরীক্ষা পাসের রোল নং-১১৩, নিবন্ধন নং-২৩৪৩৫ ও শিক্ষাবর্ষ ১৯৭৬-৭৭। তার জন্ম তারিখ ১৯৬২ সালের ২ এপ্রিল।

কয়েকজন স্থানীয়ের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ১৯৭১ সালে মৌ. আয়নুদ্দিন কাজীর ছেলে তোফাজ্জেল হোসেন প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন শিশু। সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরে আসার কিছুদিন পর শুনতে পাই তিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন তা আমাদের বুঝে আসে না। এ বিষয়টি তদন্ত করলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

আরও পড়ুনঃ  মাফ চেয়েও গুলি থেকে রক্ষা পাননি জুনায়েদ, হারাতে হয়েছে পা

তোফাজ্জেল হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, চুনাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করিনি এবং সেনাবাহিনীতে চাকরি করিনি। আমি অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছি। তবে কিভাবে আপনি সেনাবাহিনীর অবসরভাতা তুলছেন এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।

আমতলী উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার একেএম সামসুদ্দিন শানু বলেন, তোফাজ্জেল আমার ভগ্নিপতি। যারা যাচাই-বাছাই করেছেন তারা বলতে পারবেন কীভাবে তোফাজ্জেল মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন।

প্রত্যায়ন দিয়েছেন কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান। তিনি আরও বলেন, আমার ভগ্নিপতি সেনাবাহিনীর চাকরি শেষে অবসর নিয়েছেন।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ সংবাদ