Saturday, June 28, 2025

অর্থ পাচারে নিজেই মানি এক্সচেঞ্জ চালু করেন ডিবি হারুন

আরও পড়ুন

বহুল আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ। বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা সর্বশেষ ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি)। সরকারি স্কেল অনুযায়ী তৃতীয় গ্রেডের চাকরিজীবী হিসেবে সর্বসাকুল্যে বেতন ৮০ হাজার টাকারও কম। অথচ সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে গড়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। টাকা পাচারের পথ সহজ করতে নিজেই চালু করেন মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চাকরি জীবনের শুরু থেকেই হারুন ছিলেন বেপরোয়া। কখনোই চাকরি বিধিমালার তোয়াক্কা করেননি। যখন যেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই নানা অনিয়মে জড়িয়েছেন। প্রতিটি ধাপে প্রতারণা ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে জড়ালেও তাকে কখনো শাস্তি পেতে হয়নি। বরং পদায়ন করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব ইউনিটে। ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, জিম্মি করে অর্থ আদায়, মারধর, জমি দখল, বাড়ি দখল, প্লট দখল, ফ্ল্যাট দখল, গুম, খুন, হত্যা, অর্থ পাচার, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, আটকে রেখে নির্যাতন, নিয়োগ বাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারিসহ এহেন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে জড়াননি হারুন।

তবুও বছর বছর পেয়েছেন পদোন্নতি। এসব অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জ ঘুরে ডিবি হারুনের অন্তত হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুনঃ  চীনকে বাংলাদেশে সোলার প্যানেল স্থানান্তরের আহ্বান ড. ইউনূসের

সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও আছে হারুনের। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি দখল ও দেখাশোনার জন্য আছে তিন সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি। নামে-বেনামে অন্তত তিনটি রিসোর্টের মালিকানা আছে তার। রয়েছে একাধিক আবাসিক হোটেল। আরও অন্তত ১০টি কোম্পানির মালিক তিনি। শুধু ঢাকায়ই আলিশান বাড়ি করেছেন দুই ডজনেরও বেশি। এর বাইরে আছে অগণিত প্লট ও ফ্ল্যাট।

কথিত মামা জাহাঙ্গীর আলমের নামে গড়েছেন এসব সম্পদ। দখল করা সম্পত্তি বিক্রি করে সে টাকা দেশের বাইরে পাচার ও বিদেশে গড়ে তোলা সম্পদ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব আলাদা কমিটির। অন্তত ছয়টি দেশে ব্যবসা গড়েছেন অঢেল টাকার।

রয়েছে হারুনের।

বনানী কবরস্থানের দক্ষিণ পাশে ২০ কাঠার প্লট দখল করে একটি কোম্পানির কাছে ৭০ কোটি টাকায় বিক্রি করেন হারুন। টঙ্গীর সাতাইশ মৌজায় ৮ বিঘা জমিতে কোনো অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে ‘জেএইচ-জিওটেক্স লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। টঙ্গীর গুশুলিয়া মৌজায় ছায়াকুঞ্জ-৫ আবাসিক প্রকল্পের ভেতরে ১২ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসিক হোটেল।

আরও পড়ুনঃ  এবার হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচির ডাক হাসনাত আব্দুল্লাহর

এখানে ড্রেজার দিয়ে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে এরই মধ্যে। এটি টঙ্গীর চিহ্নিত ভেতরে। অভিযোগ রয়েছে, গাজীপুরের পুলিশ সুপার থাকার সময় ওই এলাকার ভূমিদস্যু কামরুজ্জামান ওরফে কামরুল ওরফে মাউচ্ছা কামরুলের সঙ্গে সখ্য ছিল হারুনের। কামরুলের ভূমিদস্যুতার রক্ষক ছিলেন এই পুলিশ সুপার। সম্প্রতি কামরুলের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে ডিআইজি হারুনের উপস্থিতির ছবি ও ভিডিও কালবেলার হাতে রয়েছে।

এ ছাড়া হারুনের নামে কিশোরগঞ্জে মিঠামইনে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নামে একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট রয়েছে। যেটি পরিচালনা করেন হারুনের ভাই ডাক্তার শাহরিয়ার। গাজীপুরে রয়েছে সবুজ পাতা রিসোর্ট এবং ‘গ্রিন টেক’ নামে আরও একটি বিলাসবহুল রিসোর্টের শেয়ার। এ ছাড়া নন্দন পার্কেও শেয়ার আছে হারুনের। আছে আমেরিকান ডেইরি নামে একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ। এই কোম্পানির এমডি হারুনের স্ত্রী। ময়মনসিংহের ত্রিশালের সাবেক এমপি আনিসের সঙ্গে ফিশারিজ এবং রেস্টুরেন্টের যৌথ ব্যবসা আছে হারুনের।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের ব্যক্তিগত নম্বরে টানা কয়েক দিন বারবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুনঃ  এআই প্রযুক্তি দাজ্জাল আবির্ভাবের প্রমাণ: মুফতি হাবিবুর রহমান মিসবাহ

তার কথিত মামা জাহাঙ্গীরের মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে। শনিবার (১৭ আগস্ট) উত্তরার জাহাঙ্গীরের অফিস ও বাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বাসার নিরাপত্তাকর্মী ইফাতুল কালবেলাকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর সাহেব এখানে একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। দুই সপ্তাহ ধরে স্যার এখানে আসেন না। তার পরিবারের কেউ এখানে এখন নেই।’

সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘একজন পুলিশ কর্মকর্তা বা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তার যে বৈধ আয়, তার সঙ্গে সম্পদের পরিমাণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। দেশে-বিদেশে তিনি যে সম্পদ অর্জন করেছেন, সেটি দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে তার কাছে যে ক্ষমতা ছিল, সেটির অপব্যবহার করেছেন তিনি। আইন লঙ্ঘন করে তাদের সংবিধানপরিপন্থি অস্বাভাবিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। সেটি ব্যবহার করেই তিনি এই সম্পদ গড়েছেন। আর এই সম্পত্তি যে তিনি একা করেছেন, সেটা কিন্তু ভাবার কোনো সুযোগ নেই। তার সঙ্গে অনেক যোগসাজশকারী ও সহায়তাকারী রয়েছে। এখন এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার এবং জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার।’

সর্বশেষ সংবাদ