আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে কর্মক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা নেওয়া বাংলাদেশ পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির বেশিরভাগ নেতাই এখন আত্মগোপনে। যারা ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের মধ্যে অনেকেই এখন পর্যন্ত অফিসে আসছেন না। যারা অফিসে আসেন, তারাও হাজিরা দিয়ে চলে যান। নেতাদের মধ্যে অনেকেই গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। কেউ কেউ সমিতির বিএনপিঘেঁষা যেসব নেতা বা গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যারা আছেন তাদের বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে যারা ঢাকায় চাকরি করছেন এবং বদলি করার পরও বিভিন্ন কায়দায় তা বাতিল করে ঢাকায় আছেন, তারাও এখন চাপের মুখে। এদিকে, ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যারা দীর্ঘদিন ধরে আছেন, তাদের ঢাকার বাইরে বদলি করার দাবি জানিয়েছেন বঞ্চিতরা।
সরকারি চাকরিজীবীরা রাজনৈতিক সংগঠনে যুক্ত হওয়ার বিধান না থাকলেও পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির বেশিরভাগ নেতাই রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এমনকি কোনো কোনো নেতা একাধিক রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে আছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ আছে, সমিতির বেশিরভাগ নেতাই বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। লেনদেনের বিনিময় তাদের ইচ্ছামতো করা হতে পারে বদলি ও পদায়ন। তাদের মতের বিরোধিতা করলেই গণপূর্ত অধিদপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হতো। এমনকি সমিতির নেতাদের কথামতো কাজ না হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অফিসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হতো। এ ছাড়া যেসব সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে অনিয়ম বা কাজ না করে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাদেরও রক্ষা করতেন সমিতির নেতারা। এমনকি তাদের অনিয়মের বিষয় তদন্ত করা হলেও এর রিপোর্ট প্রকাশ করতে বাধা দেওয়া হতো বা নিজেদের আদর্শপুষ্ট লোক দিয়ে তদন্ত করানো হতো।
জানা গেছে, সমিতির বেশিরভাগ নেতাই বিভিন্নভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বিশেষ করে যারা সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, তারাই রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন। সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরাই দীর্ঘদিন ধরে বদলি বাণিজ্য, পদায়ন, তদবির করে আসছিলেন।
অভিযোগ আছে, গত মার্চ মাসে একই উন্নয়ন কাজের বিল বারবার করার অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. মনিরুজ্জামানকে লঘুদণ্ড হিসেবে ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুরে বদলি করা হয়। সেই বদলি আদেশ ঠেকাতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির নেতারা কয়েকদিন অঘোষিত আন্দোলন করেন গণপূর্ত অধিদপ্তরে। এ নিয়ে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এমনকি ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা প্রধান প্রকৌশলীর গাড়ি আটকে দেন এবং অসদাচরণ করেন।
বাংলাদেশ পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি মোহাম্মাদ রায়হান কালবেলাকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে সমিতির সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অধিকার নিশ্চিত করাই সংগঠনের কাজ। তাদের অধিকার ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ করে সংগঠনটি। তবে কারও কাছ থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা নিইনি। কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করিনি।’
সরকারি চাকরিজীবী হয়ে অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের যুক্ত কি না—প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ আমি এবং সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু পরিষদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।’
সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘আমি নিয়মিত অফিস করছি। সমিতিতে যুক্ত কিন্তু কখনো কোনো অনিয়ম করিনি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো সুবিধা নিইনি। তদবির, বদলি, পদায়ন বাণিজ্য কখনো করিনি।’