রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকারের বিরুদ্ধে দলীয় এক নারী নেত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারিণী ভুক্তভোগী নেত্রী রাজশাহীর পবা উপজেলার বাসিন্দা। তিনি জেলা মহিলা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিন পৃষ্ঠার ওই অভিযোগপত্র গৃহীত হয়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বনাথ সরকার দীর্ঘ চার মাস ধরে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব ও নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন।
ভুক্তভোগী নেত্রী বলেন, ‘বিশ্বনাথ বাবু আমার চিকিৎসা-সংক্রান্ত সহায়তার আশ্বাস দিয়ে দিনের পর দিন ঘুরিয়েছেন, ফোনে অশালীন প্রস্তাব দিয়েছেন, এমনকি বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছেন।’
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে অভিযোগ দেন মহিলা দলের নেত্রী। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ
অভিযোগে বলা হয়, হৃদরোগ ও রক্তস্বল্পতায় ভুগতে থাকা ওই নারী ভারতীয় মেডিকেল ভিসার জন্য বিশ্বনাথ সরকারের সহায়তা চান। তখন বিশ্বনাথ সরকার তাকে তার সাগরপাড়ার বাসায় ডাকেন। বারবার যোগাযোগ করেও ভিসার বিষয়ে কোনো সাহায্য না পেয়ে হতাশ হন তিনি।
ওই নেত্রী অভিযোগপত্রে লিখেছেন, ‘‘তিনি আমাকে বলেন, ‘তোমাকে সাত বছর ধরে নজরে রেখেছি, তোমাকে বিয়ে করতে চাই।’ এমনকি তিনি রাজশাহীর হোটেলে নিয়ে সময় কাটানোর প্রস্তাব দেন। ভারতে ঘুরতে যাওয়ার এবং চিকিৎসার সব খরচ বহনের প্রলোভনও দেখান।’’
‘আমি বিনয়ের সঙ্গে জানাই যে, আপনি আমার পিতার বয়সি এবং ধর্মীয়ভাবেও ভিন্ন। আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করা আমার পক্ষে অসম্ভব।’’ এরপরও বিশ্বনাথ সরকার গভীর রাতে ফোন করে তাকে উত্ত্যক্ত করতেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
ভুক্তভোগী নারীর দাবি, ‘আমি ফোনকল রেকর্ড করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মার্শাল এবং জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী মিতালী আপাকে শুনিয়েছি। তারা প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেননি।’
তিনি অভিযোগ করেন, তাকে হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে রাখতে চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি বিশ্বনাথ সরকারের ঘনিষ্ঠ দুজন তাকে টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন। অভিযোগপত্রের অনুলিপি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার কাছেও পাঠানো হয়েছে।
রাজশাহী জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী অ্যাডভোকেট শামসাদ বেগম মিতালী বলেন, ‘ভাই, এসব আমাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাকে এসব প্রশ্ন করে বিব্রুত করবেন না।’
জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মার্শাল বলেন, ‘যার অভিযোগ, তার সঙ্গেই কথা বলেন। এসব বিষয়ে আমি কথা বলি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ‘আমার বয়স ৭৩/৭৪। আমি দলীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবার সঙ্গেই যোগাযোগ করি। যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সে আমার মেয়ের বয়সি। আমি তাকে কখনো অশালীন কিছু বলিনি বা প্রস্তাব দিইনি।’
বিশ্বনাথ আরও বলেন, ‘ অভিযোগ হয়েছে কি না, কেন্দ্র কিছু বলেছে কি না, তাও আমি জানি না। কেউ আমাকে কিছু জানায়নি।’