Sunday, March 30, 2025

পুরস্কার ও অক্সিলিয়ারি ফোর্সে নিয়োগ পাচ্ছেন ডাকাত ধরা ৫ শ্রমিক

আরও পড়ুন

ঢাকা, ২৭ মার্চ – ধানমন্ডিতে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাসায় ‘অভিযানের’ নামে ডাকাতি করতে যাওয়া দলটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মতোই প্রস্তুতি ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডাকাতদলে র‌্যাবের পোশাক পরিহিত লোকজনের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেট, বিভিন্ন সময়ে ‘সোর্স হিসেবে’ থাকা ছাত্র প্রতিনিধি এবং বোম হাতে ‘মিডিয়ার লোক’ পরিচয় দেওয়া লোকও ছিল।

বুধবার (২৬ মার্চ) ভোরের ওই ঘটনার সময় ‘জনতার সহায়তায়’ ওই দলের চারজনকে ও রাতে আরও দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর এসব কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের-ডিএমপি রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম।

গ্রেপ্তাররা হলেন- ফরহাদ বীন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩), ওয়াকিল মাহমুদ (২৬), আবদুল্লাহ (৩২) ও সুমন (২৯) ।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত র‌্যাব লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র‌্যাব লেখা ক্যাপ, একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি লোহার তৈরি ছেনি, একটি পুরাতন লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ ও নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

মাসুদ আলম বলেন, ওই সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রে ২৫-৩০ জন ছিল। অপারেশন পরিচালনার জন্য পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে ধরনের প্রিপারেশন নিয়ে যায়, সে ধরনের ফুল প্রিপারেশন তাদের ছিল। তাদের সঙ্গে র‌্যাবের কটি পরা এবং জ্যাকেট পরা অবস্থায় লোকজন ছিল। সঙ্গে মাইক্রোফোন হাতে মিডিয়ার লোক ছিল। যারা সোর্স হিসেবে কাজ করে ৫-৬ ছাত্র প্রতিনিধি ছিল।

ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কের ওই বাসায় ডাকাতির বিবরণে তিনি বলেন, ওই বাড়িটির মালিক এম এ হান্নান আজাদ নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর। যার ‘অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। তার বসুন্ধরায় দোকানের পাশাপাশি তাঁতীবাজারে কারখানা রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী মারা গেছেন

উপকমিশনার বলেন, বাড়িটির নিচতলায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস আছে। এ ছাড়া ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে।

তিনি বলেন, ডাকাত দলটি তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকারে ওই বাসার সামনে এসে গেটে নিরাপত্তা কর্মীদের বলে, তারা র‌্যাবের লোক, তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তারা বাড়িতে অভিযান চালাবে বলে তাড়াতাড়ি গেট খুলতে বলে। তাদের কয়েকজনের গায়ে র‌্যাব লেখা কটি পরা ছিল।

ডিসি রমনা বলেন, সে সময় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। তখন অভিযুক্ত ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালাগালি করতে থাকে এবং গেট না খুললে তাদের হত্যার হুমকি দেয়। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন গেটের উপর দিয়ে উঠে জোর করে গেট খুলে ফেলে। এরপর তারা সবাই জোর করে বাড়িতে ঢুকে সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ারটেকার ও গাড়ি চালককে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

ব্যবসায়ীর বাসায় স্বর্ণ থাকতে পারে ধারণা করে ডাকাত দলটির টার্গেট ওই বাসা থাকলেও তারা নিচতলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস থেকেই ‘তল্লাশির’ নামে লুটপাট শুরু করে জানিয়ে তিনি বলেন, “নিচতলার অফিসের গেট ভেঙে পিয়নকে মারধর করে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর ডাকাতরা তাকে ভয়তীতি দেখিয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে ফেলে। এ সময় গেট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিনজন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসেন।

আরও পড়ুনঃ  লিবিয়া থেকে ফিরলেন ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

তিনি বলেন, ডাকাতরা তখন তাদেরও আটক করে মারধর করে অফিসের চাবি ও বাসার চাবি দিতে বলে। এরপর তারা চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে নেয় ও অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তাদের আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসে ঢুকে আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়।

সবশেষে বাড়ির মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বাসা থেকে দেড়লাখ টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক আড়াই ভরি স্বর্ণ লুট করে নেয়। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নামিয়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে।

উপকমিশনার মাসুদ বলেন, এসবের মধ্যে কেউ একজন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে খবর দিলে নিকটস্থ পুলিশের টহল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তাৎক্ষণিকভাবে ডাকাত দলের লোকজন পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ডাকাত দলের সদস্যদের হাতাহাতিও হয়, এতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হন। তখন আশেপাশে থাকা লোকজনের সহায়তায় পুলিশ চারজনকে আটক করে। ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। পরে ওই ব্যবসায়ীর ভাগ্নে তৌহিদুল ইসলামের করা একটি মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আরও পড়ুনঃ  রিমান্ড ইস্যুতে আইনজীবীকে কী বললেন দীপু মনি!

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পরিপ্রেক্ষিতে রাতে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি গাড়িসহ আবদুল্লাহ ও সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলেও জানান তিনি।

আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ছয় জনের বাইরে যারা আছে শিগগিরই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো বলে আশা করছি। তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, রিমান্ডে এনে এসব তথ্য ক্রসচেক করব। যেহেতু ২৫-৩০ জনের মতো একটা টিম কাজ করেছে, তাই বাকিদের গ্রেপ্তারের সুবিধার্থে কিছু তথ্য আমরা পরে ডিসক্লোজ করতে চাচ্ছি।

ওই দলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সদস্য জড়িত কি-না অথবা রাজনৈতিক কোনো পরিচয় রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ছয়জনকে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবো।

এ সময় ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, যাদের সহায়তায় ঘটনাস্থলে চার ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন পাঁচ জনকে আর্থিক পুরস্কার দেওয়াসহ ‘অক্সিলারি ফোর্স’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকাজুড়ে টহল ও তল্লাশিচৌকি ‘জোরদারের’ পরও এতো বড় একটা ডাকাত দলের ডাকাতির বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোজা ও ঈদ ঘিরে আমাদের বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল কার্যক্রম জোরদার ও তল্লাশিচৌকি স্থাপন। দুই-একটা ঘটনা যেগুলো ঘটছে সঙ্গে সঙ্গে ডিটেক্ট করছি। আমরা আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করছি, সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

এই ঘটনায় কেউ একজন ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে ‘বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন’ মন্তব্য করে তিনি এমন কোনো ‘সন্দেহজনক’ ঘটনায় পুলিশকে অবহিত করতে বলেন।

সর্বশেষ সংবাদ