ছাত্র বিক্ষোভের ওপর ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন ক্র্যাকডাউনের নিন্দা জানাতে শুক্রবার নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাসের বাইরে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
ফিলিস্তিনের পক্ষে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করা আরও এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। লেকা কর্দিয়া নামের ওই ছাত্রী একজন ফিলিস্তিনি। এছাড়া ভারতীয় এক ছাত্রীর ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৪ মার্চ) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এর এজেন্টরা লেকা কর্দিয়াকে নির্বাসনের জন্য গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া “হামাসকে সমর্থনকারী কার্যকলাপে” অংশগ্রহণের জন্য ভারতের রঞ্জনী শ্রীনিবাসনের ভিসা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বারবার হামাসের সমর্থনে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকে বিশৃঙ্খলা হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে “সন্ত্রাসীদের” সমর্থন করার অভিযোগও করেছে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ফিলিস্তিনি ছাত্রকে নির্বাসনের জন্য আইসিই হেফাজতে নেয়ার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে কর্দিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলো। নাগরিক স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই করা ব্যক্তিরা বলছেন, এই গ্রেপ্তারের অর্থ বাকস্বাধীনতার অধিকারকে দমিয়ে ফেলা। এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া খলিলের আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, আইনি পরামর্শের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। তার মক্কেলের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবীর যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি।
খলিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা, তার গ্রিন কার্ডও রয়েছে। এছাড়া খলিলের আমেরিকান স্ত্রী আট মাসের গর্ভবতী। ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য বলেছে যে তারা খলিলের গ্রিন কার্ড কেড়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নয়েম এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও অধ্যয়ন করার জন্য ভিসা দেয়া একটি বিশেষাধিকার। আপনি যখন সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদের পক্ষে কথা বলেন, সেই বিশেষাধিকার প্রত্যাহার করা উচিত এবং আপনার এই দেশে থাকা উচিত নয়।”
এদিকে ভারতীয় শিক্ষার্থীর ভিসা প্রত্যাহারের কয়েকদিন পরে তিনি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত করে নিয়েছেন। মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, রঞ্জনি শ্রীনিবাসন হামাসের সমর্থন করার কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। ৫ মার্চ স্টেট ডিপার্টমেন্ট তার ভিসা প্রত্যাহার করেছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ ১১ মার্চ স্ব-নির্বাসনে কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিপিবি) এজেন্সির অ্যাপ ব্যবহার করে তার ভিডিও ফুটেজ পেয়েছে।
এভাবে স্ব-নির্বাসন বা কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়ার আগে স্বেচ্ছায় দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার ফলে, মার্কিন সামরিক বিমানে করে সম্প্রতি ভারতে পাঠানো নির্বাসিতদের মতো ঝুঁকি থেকে মুক্ত হয়েছেন ভারতীয় ওই ছাত্রী। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নয়েম বিমানবন্দরে শ্রীনিবাসনের একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন এবং বলেছেন যে “সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদের পক্ষে যে কেউ দেশে থাকা উচিত নয়”।
তিনি ওই পোস্টে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস এবং পড়াশোনা করার জন্য ভিসা দেয়া একটি বিশেষাধিকার। আপনি যখন সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদের পক্ষে কথা বলেন, তখন সেই বিশেষাধিকার প্রত্যাহার করা উচিত এবং আপনার এই দেশে থাকা উচিত নয়। আমি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ‘সন্ত্রাসীদের’ প্রতি সহানুভূতিশীলদের একজনকে স্ব-নির্বাসনের জন্য সিবিপি হোম অ্যাপ ব্যবহার করতে দেখে আনন্দিত”।
শ্রীনিবাসন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে নগর পরিকল্পনা বিষয়ের ডক্টরেটের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, তিনি কলম্বিয়ার গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ আর্কিটেকচার, পরিকল্পনা এবং সংরক্ষণে গবেষণা করছিলেন। ভারতীয় এই ছাত্রী আহমেদাবাদের সিইপিটি ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং ফুলব্রাইট নেহেরু ও ইনলাক্স স্কলারশিপে হার্ভার্ড থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
তিনি ওয়াশিংটনে “জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা সীমান্তবর্তী সম্প্রদায়গুলো” এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ওয়েস্ট ফিলাডেলফিয়া ল্যান্ডস্কেপ প্রজেক্টের (ডব্লিউপিএলপি) গবেষক হিসেবে ওয়াশিংটনে একটি পরিবেশগত অ্যাডভোকেসি অলাভজনক সংস্থার জন্যও কাজ করেছেন।
প্রসঙ্গত, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যার আটটি ক্যাম্পাস রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প এবং অন্যান্য রিপাবলিকানরা বারবার বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আক্রমণ করে আসছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন ক্ষমতায় আসলে ওই বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।