Saturday, June 28, 2025

চীনের কাছে ফের গুরুত্ব বেড়েছে বিএনপির

আরও পড়ুন

প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে কূটনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় বিএনপি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনসহ ক্ষমতাধর কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তা ছাড়া সময়ের ব্যবধানে নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী চীনের কাছেও গুরুত্ব বেড়েছে বিএনপির। সম্প্রতি দলটির সঙ্গে চীনের নানামুখী কর্মতৎপরতায় বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে চীনও চাইছে সম্পর্ক আরও গভীর করতে।

এরই অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে দেশটি সফরে গেছে বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে রয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা। গতকাল বিকেল ৩টায় চায়না এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চীন রওনা হন তারা। আগামী ১৬ নভেম্বর তারা দেশে ফিরবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৭ থেকে ১৬ নভেম্বর চীনে দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে দেশটির রাজধানী বেইজিংয়ে ‘পলিটিক্যাল পার্টি প্লাস’ কো-অপারেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওই অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। এক সপ্তাহ চীনে অবস্থানকালে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উচ্চপর্যায়ের একাধিক বৈঠকে অংশ নেবেন। এই সফরের পর আগামী বছরের জানুয়ারিতে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের আরও একটি প্রতিনিধিদল চীন সফরে যেতে পারে। চীন যাওয়ার আগে বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত কালবেলাকে বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের গোড়াপত্তন হয়। আমাদের সঙ্গে চীনের উষ্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল। বরাবরই বিদেশি রাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়। চীনও এত বছর তাই করেছে। তবে তাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের ছেদ হয়নি। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারাই আমন্ত্রণ জানিয়েছে; আমরা যাচ্ছি। আমাদের চিন্তাভাবনাগুলো বিনিময় (শেয়ার) করব। আশা করছি, তারা বাংলাদেশের জনগণের দুঃখ-কষ্ট ও দেশের বাস্তবতা সবসময় উপলব্ধি করবে এবং সেই অনুযায়ী ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুনঃ  মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা, ২ মাসের খাবার মজুদের নির্দেশ, যুদ্ধ কি আসন্ন?

অমিত জানান, বিএনপি ১৯৭৯ সাল থেকে চীনের আমন্ত্রণে সেই দেশে যাচ্ছে। মাঝখানে কিছুটা বিরতি ছিল। আর করোনার সময় ভার্চুয়ালি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অনুষ্ঠানে অংশ নেয় বিএনপি। দলটির ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির আরেক সদস্য ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল কালবেলাকে বলেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্কটা আসলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে। তারা বাণিজ্যকে বেশি গুরুত্ব দেয়। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হয়তো তারা মনে করছে, পরবর্তী সরকারে থাকবে বিএনপি। তাই তারা আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়। বিএনপির ফরেন পলিসি সব দেশের জন্য এক। আমরা দুপক্ষের স্বার্থ সমুন্নত রেখে সম্পর্ক গড়ায় বিশ্বাসী। বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির বিশেষ সহকারী বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু কালবেলাকে বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর স্বাভাবিকভাবে কূটনীতিতে নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় বিদেশি রাষ্ট্রগুলো। বিশেষ করে প্রভাবশালী দেশগুলোর আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী চীন মনে করে, বিএনপি আগামীতে সরকারে থাকবে। এজন্য বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে চীন। বিএনপি কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায় বলে জানান বিএনপির এই নেতা।

আরও পড়ুনঃ  ৬ দিনের রিমান্ডে আমু, মেরে বের করে দেওয়া হল আইনজীবীকে

আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই বিএনপির সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির আভাস পাওয়া গেছে। এক দশকেরও বেশি সময় পর গত ২৫ সেপ্টেম্বর চীনের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এর আগে গত ২১ আগস্ট ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে মির্জা ফখরুলসহ দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দেড় ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সঙ্গে চীনের পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও গভীর হবে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হবে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, ওয়ান চায়না পলিসিতে বিএনপি সবসময় বিশ্বাস করে এসেছে, আমরা এখনো সে ঘোষণাটা আরও দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই। বৈঠক শেষে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, আমরা আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা এবং পর্যালোচনা করেছি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও বিএনপি একসঙ্গে কাজ করতে চায়। জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে সবশেষ ২০১৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হয়। ২০১৪ সালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে বিএনপির ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করে। এর পরের বছর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল চীন সফর গেলেও বিএনপি কোনো আমন্ত্রণ পায়নি। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে আবারও চীন সরকারের আমন্ত্রণে যান বিএনপির তিন নেতা। মূলত ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিএনপির সঙ্গে চীনের সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। ২০২১ সালে চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের বেশ অবনতি হয়। তবে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সফরের পর সেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, বিএনপি সরকারে থাকাকালে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক ভালো ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ক্ষমতায় নেই। ফলে সম্পর্কে কিছুটা তো ঘাটতি হয়েছে। সেই পুরোনো সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আমাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি কালবেলাকে বলেন, পৃথিবীতে সকল পররাষ্ট্র নীতির সম্পর্কটা হয় স্বার্থের ভিত্তিতে। প্রতিবেশী একজনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ভালো সেটা বন্ধু হতে পারে শত্রুও হতে পারে। আমরা সবসময়ই প্রতিবেশীর সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক চাই। আমরা প্রত্যাশা করি, সেটা আরও অগ্রগতি হবে। ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চীন মনে করেছে, শুধু আওয়ামী লীগের সঙ্গে নয় বরং দেশের জনগণের সম্পর্ক গড়া জরুরি। সেই জায়গা থেকে চীন মনে করে বিএনপি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে সেজন্যই বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে চায়। আর বিএনপিও বাংলাদেশের বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়।

আরও পড়ুনঃ  ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানো কে এই তরুণ

সর্বশেষ সংবাদ