Thursday, March 20, 2025

জন্মদিনে কী দিবা আপু…

আরও পড়ুন

‘প্রতিদিন দু-একবার করে ও আমাকে ফোন দিত। কেমন আছি, ও কেমন আছে—এমন কথাই হতো বেশি। দেশ এবং পরিবার নিয়ে ও অনেক পরিকল্পনা করত। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকেও কল দেয়। এ সময় বলে, আপু, একটা অপারেশনে যাচ্ছি বড় একটা ডাকাত দলের সদস্যদের ধরতে। এরপর বলে, সামনেই তো আমার জন্মদিন, কী দিবা আপু। আমি সেদিন ছুটিতে আসব। এরপর ফোন কেটে দেয়।’ কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করার সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জনের বড় বোন সুচি বেগম। সুচি বেগম স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকেন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে এসেছেন টাঙ্গাইলে গ্রামের বাড়িতে।

আরও পড়ুনঃ  ইসরায়েলি অস্ত্রে শক্তি বাড়াচ্ছে মুসলিম দেশ

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় তানজিম সারোয়ারের মরদেহ কক্সবাজার থেকে হেলিকপ্টারে টাঙ্গাইল হেলিপ্যাডে এসে পৌঁছায়। এ সময় পুরো এলাকা ঘিরে রাখেন সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে চারপাশ ভারি হয়ে ওঠে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তার মা নাজমা আক্তার। তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রতিবেশীরা। মা বিলাপ করে বলছেন, ‘ও আমার আত্মা ছিল। ও যখন অপারেশনে যায়, বলেছি তুমি দেশের জন্য ও দশের জন্য করিও। যেটি ভালো হয় সেটি দেখেশুনে করিও।’ এ সময় নাজমা বেগম সরকারপ্রধান ও সেনাপ্রধানের কাছে ছেলে হত্যার বিচার চান। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা সারোয়ার জাহানও প্রায় বাকরুদ্ধ। তিনি বলেন, ‘এ রকম মৃত্যু যেন আর কারও না হয়। আর যেন কোনো বাবার এভাবে আর্তনাদ করতে না হয়। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চাই। তানজিমই আমার একমাত্র ছেলে। সেই ছিল বাড়ির একমাত্র উপার্জন করার লোক। আমি এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও ফাঁসি চাই।’

আরও পড়ুনঃ  একযোগে চাকরি ছাড়ার হুমকি ইসরায়েলি সেনাদের

এদিকে, আসরের নামাজের পর গ্রামের বোয়ালী মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে তানজিমকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে নিহত সেনা সদস্যকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুলসংখ্যক মানুষ জানাজায় অংশ নেন।

তানজিমের বড় বোন সুচি বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে সারাকে শান্তি মিশন থেকে এসে একটা আইফোন কিনে দেবে বলেছিল ভাই। ভাগনিকে আর ফোন কিনে দেওয়া হলো না নির্জনের (নিহত তানজিম)।’ এসব বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সুচি।

আরও পড়ুনঃ  মহাদুর্নীতিবাজ ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী আশিক

তানজিমের ভগ্নিপতি এনামুল হক বলেন, ‘নির্জন সেনাবাহিনীতে বড় চাকরি করলেও ছোটদের মতো স্বভাব রয়ে গিয়েছিল। বাচ্চাদের মতো মোবাইলে গেমস খেলত। বাসায় এলে আমার ছোট মেয়ের সঙ্গে দিনরাত মোবাইলে গেমস খেলত।’

তিনি বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরে শান্তি মিশনে যাওয়ার কথা ছিল নির্জনের। সেখান থেকে এসে বিয়ে করবে বলেও জানিয়েছিল। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর আগেই আমার শ্যালক পরপারে চলে গেল। আমরা তার খুনিদের ফাঁসি চাই।’

সর্বশেষ সংবাদ