Thursday, April 24, 2025

লক্ষ্মীপুরে বন্যার্তদের জন্য নেই পর্যাপ্ত বরাদ্দ, ত্রাণের জন্য হাহাকার

আরও পড়ুন

বন্যাকবলিত লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ খাদ্যসংকটে হাহাকার করছেন। যে যেভাবে পারছেন ত্রাণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় উদ্ধারকারী ও ত্রাণ সহায়তাকারীরা দুর্গম এলাকাগুলোতে যেতে পারছেন না বলে জানা গেছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় বলে স্বীকার করেন জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান। এজন্য ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সকালে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বরাদ্দকৃত নগদ অর্থ ও চালের পরিমাণ তুলে ধরা হয়।

এ সময় জানানো হয়, লক্ষ্মীপুরে ৭ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৩০ হাজার মানুষ। বন্যা দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৭০০ টন চাল এবং নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৯ টন চাল ও ১৬ লাখ টাকা ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ  কুমিল্লা কোতোয়ালি থানা পরিদর্শনে ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি

জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আরও ৩০ লাখ টাকার চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। সভায় বন্যা ব্যবস্থাপনা ও বন্যার্তদের সর্বাত্মক সহায়তায় সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করার কথা জানানো হয়। এসময় যেকোনো সহায়তায় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল মাজিদুল হক রেজা, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী রেজাই রাফিন সরকার, সিভিল সার্জন ডা. আহমেদ কবীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবি সিদ্দিকী প্রমুখ।

এদিকে জেলার বন্যাকবলিত যেসব দুর্গম এলাকায় এখনো খাদ্য সহায়তা যথেষ্ট পৌঁছায়নি সেসব এলাকাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, দিঘলী, চরশাহী, উত্তর জয়পুর, মান্দারী, দত্তপাড়া, বাঙ্গাখাঁ, লাহারকান্দি, তেওয়ারীগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের রহমতখালী খাল সংলগ্ন লামচরী, সমসেরাবাদ, বাঞ্চানগর, মধ্য বাঞ্চানগর, মজুপুর এলাকা, চররুহিতা, পার্বতীনগর, কমলনগরের তোরাবগঞ্জ, চরকাদিরা, রামগতির চরপোড়াগাছা, চরবাদাম, রামগঞ্জের লামচর, কাঞ্চনপুর, চন্ডিপুর, ভাটরা, ভোলাকোট, রামগঞ্জ পৌরসভা, ভাদুর, করপাড়া, দরবেশপুর, রায়পুরের সোনাপুর, কেরোয়া, চরপাতা, বামনী, চরমোহনা, রায়পুর, দক্ষিণ চরআবাবিল ইউনিয়ন ও রায়পুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা। এরমধ্যে দিঘলী, চরশাহীসহ দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না।

আরও পড়ুনঃ  নেশার টাকা না পেয়ে মাকে কোপালো ছেলে, আহত স্ত্রী

সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া এবং মোহাম্মদ নগর গ্রাম দুটি ঘুরে চরম মানবিক বিপর্যয় লক্ষ্য করা গেছে। গ্রামের কোথাও পানি ব্যতীত মাটির চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়নি। যা দৈয়া গ্রামের পশ্চিম অংশের চিত্র ছিল একেবারে ভয়াবহ। সড়কের ওপর কোমর পানি, কোনো কোনো বাড়ির ভেতরে বুক পরিমাণ পানি ছিল। এমন কোনো ঘর দেখা যায়নি, যেটাতে পানি ঢুকেনি। প্রতিটি ঘরে কম-বেশি পানি ঢুকে পড়েছে। গুটিকয়েক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। বেশিরভাগ পানিবন্দি হয়ে পড়ে আছেন।

এসব গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, সড়ক যোগাযোগ ভালো না। রাস্তা দিয়ে ভেলা বা নৌকা চালাতে হয়। পানির উচ্চতা বেশি হওয়ায় চাইলেই বের হওয়া যায় নাভ। এলাকার দোকানগুলোতেও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া যায় না। প্রয়োজন পড়লেও কিছু ক্রয় করতে পারি না। কেউ কোনো সহায়তা নিয়ে আসেনি। মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছি।

আরও পড়ুনঃ  পাবনায় যুবদল নেতার জমি দখল করলেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা

স্থানীয় বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষক, দিনমজুর ও অটোরিকশা চালক। সকলে কর্মহীন এখন। খাদ্যের যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। গবাদি পশুগুলোকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রের নীচে গাদাগাদি করে পশুগুলোকে রাখা হয়েছে। সেগুলোও খাদ্য সংকটে ভুগছে।

অপরদিকে, প্রতিদিনই ছোট ছোট ট্রাক, পিক আপ, ট্রাক্টর, খোসা নৌকায় করে স্থানীয়সহ ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে ছুটে আসা অনেকগুলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা যায়।

তবে খাদ্য সহায়তা প্রদানকারী স্বেচ্ছাসেবীদের অনেকেই জানান, দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নৌকারও প্রয়োজন। সাহায্যকারীরা এ কারণেও ওইসব এলাকায় খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে পারছেন না।

সর্বশেষ সংবাদ