ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে আমেরিকায় এক ভারতীয় গবেষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্প্রতি জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বদর খান সুরিকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে হামাসের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগও রয়েছে।
আদালতের ডকুমেন্টের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো বলছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গত মঙ্গলবার গাজায় নতুন করে হামলা চালায় ইসরায়েল। এর প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়। প্রতিবাদ হয় আমেরিকার বিভিন্ন শহরেও। এর জেরেই এবার ভারতীয় এক গবেষককের গ্রেপ্তার করা হলো।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রঞ্জনী শ্রীনিবাসনের স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করার কয়েকদিন পরই এই ঘটনা ঘটল। ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের বৃহত্তর দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে শ্রীনিবাসনের ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয়। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য মার্কিন ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকজন ছাত্র ও মানবাধিকারকর্মীর বিরুদ্ধে গত এক সপ্তাহে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বদর খান সুরির ব্যাপারে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, সুরির স্ত্রী মাফাজ সালেহ একজন ফিলিস্তিনি। মাফাজের বাবা আহমেদ ইউসুফ হামাসের সিনিয়র রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলে জানা গেছে।
এদিকে বদরের আইনজীবী জানিয়েছেন, লুসিয়ানার আলেকজান্দ্রিয়ায় বদরকে আটক করা হয়েছে। সেখানে তিনি অভিবাসন সংক্রান্ত মামলায় আদালতের তারিখের অপেক্ষায় আছেন। তাঁকে তাঁর বাড়ির বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট মার্কো রুবিও মন্তব্য করেছিলেন, ‘তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য বদরকে আমেরিকা থেকে বহিষ্কার করা যেতে পারে।’
এই আবহে বদরের আইনজীবীর বক্তব্য, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের দাবিতে আওয়াজকে বন্ধ করতে বদরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই আবহে ভার্জিনিয়ার আদালতের বিচারক প্যাট্রিশিয়া টোলিভার জাইলস জানান, আদালতের নির্দেশ ছাড়া বদরকে আমেরিকা থেকে বের করে দেওয়া যাবে না।
জানা যায়, স্ত্রীর সঙ্গে ২০১১ সালে গাজায় দেখা হয়েছিল বদরের। ২০১৪ সালে বিয়ে করেন। তারপর তিনি দিল্লিতে চলে যান। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন বদর। অবশেষে নেলসন ম্যান্ডেলা সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট রেজুলিউশন থেকে সংঘাত বিশ্লেষণ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০২০ সালের পর পিএইচডি শেষে আমেরিকায় পাড়ি জমান সুরি। সেখানে তিনি জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলওয়ালিদ সেন্টার ফর মুসলিম-ক্রিশ্চিয়ান আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে যোগ দেন।
এদিকে মাফাজ বর্তমানে স্কুল অব ফরেন সার্ভিসের সেন্টার ফর কনটেম্পোরারি আরব স্টাডিজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করছেন। সুরি বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় সংখ্যাগুরুবাদ ও সংখ্যালঘুদের অধিকার বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন এবং ইরাক ও আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে গবেষণা করছেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, যে মার্কিন আইনে সুরি গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাতে নির্বাসনেরও বিধান আছে। সুরির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামাস ও ইহুদিবিদ্বেষ প্রচারের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, যে কোনো অবৈধ কার্যকলাপে সুরির জড়িত থাকার বিষয়ে তারা অবগত নয় এবং তাঁকে আটকের কারণ সম্পর্কেও অবহিত করা হয়নি।
এর জেরে সুরির আইনজীবী হাসান আহমেদ বলেন, তাঁর মক্কেলকে ‘অপহরণ’ করা হয়েছে। কারণ তাঁর কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগও আনা হয়নি।