দীর্ঘ ৫০ বছর পর ইসরায়েল যাচ্ছে সিরিয়ার দ্রুজ ধর্মীয় গোষ্ঠীর একটি প্রতিনিধি দল। তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েলের দ্রুজ সম্প্রদায়ের প্রধান। যদিও দামেস্কে ইসরায়েলি বিমান হামলার ফলে দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েছে। এ অবস্থার মধ্যে সিরিয়ান দ্রুজরা ইসরায়েলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর রয়টার্স
দ্রুজ সম্প্রদায় হলো একটি আরব সংখ্যালঘু। যারা ইসলামি রীতি নীতি অনুযায়ী ধর্ম পালন করেন। এই সম্প্রদায়ের লোকজন বিশেষ করে লেবানন, সিরিয়া, ইসরায়েল এবং ইসরায়েলের অধিকৃত গোলান মালভূমিতে বসবাস করে। এসব অঞ্চলে দ্রুজ সম্প্রদায় একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গড়ে তুলেছে।
ইসরায়েলি দ্রুজ সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ মোয়াফাক তারিফ বলেন, গত ৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম ১০০ সিরিয়ান দ্রুজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) ইসরায়েলে আসছেন। ১৯৭৩ সালে ইয়োম কিপুর যুদ্ধের পর সিরিয়ান দ্রুজ সম্প্রদায় এবার ইসরায়েলে যাচ্ছে। ইয়োম কিপুর যুদ্ধ হয়েছিল ইসরায়েল, সিরিয়া ও মিশরের মধ্যে।
তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে জুলিসে অবস্থিত তার নিজ বাড়িতে দ্রুজদের সঙ্গে মিলিত হবেন। এজন্য শুক্রবারকে তারা একটি ঐতিহাসিক দিন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কারণ বহু বছর ধরে এ ধরনের উৎসব থেকে তারা বঞ্চিত ছিল।
সিরিয়া থেকে দ্রুজ সম্প্রদায়ের যে ১০০ জন ধর্মীয় নেতা যাচ্ছেন। তারা সিরিয়ার হারমোনের দ্রুজ গ্রামে বসবাস করেন। ইসরায়েল সফরে তারা তিবেরিয়াসের পশ্চিমে লোয়ার গ্যালিলিতে অবস্থিত শুয়াইব নবীর সমাধিস্থল পরিদর্শন করবেন।
সিরিয়ান দ্রুজদের এসব অঞ্চল পরিদর্শনের কথা থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। ইসরায়েল দেখানোর চেষ্টা করছে যে সিরিয়ান দ্রুজদের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। যদিও সিরিয়ার ইসলামপন্থি নতুন সরকারের প্রতি তাদের সন্দেহ দিন দিন বাড়ছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ এই সপ্তাহে বলেছিলেন, সিরিয়ার দ্রুজদের ইসরায়েলে প্রবেশে অনুমতি দেয়া হবে। তাদের জন্য সীমিতভাবে সীমান্ত খুলে দেয়া হবে। যা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পর এই প্রথম।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে সিরিয়ার দ্রুজ সম্পদ্রায়ের জন্য মানবিক সহায়তাও পাঠানো হয়েছে।
দামেস্কের সঙ্গে উত্তেজনা
দামেস্কের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমান বাহিনী সিরিয়ার রাজধানীতে ইরান সমর্থিত ইসলামিক জিহাদি আন্দোলনের কমান্ড সেন্টারকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
সিরিয়ার নতুন সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার প্রতি ইসরায়েলের ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে। ইসরায়েলের মন্ত্রীরা হায়াত তাহরির আল-শাম গোষ্ঠীর জিহাদি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন।
ইসরায়েল সিরিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে সৈন্য মোতায়েন করেছে এবং সতর্ক করেছে যে তারা দামেস্কের দক্ষিণে সিরিয়ান সৈন্য মোতায়েন মেনে নেবে না। সিরিয়ায় ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর ইসরায়েল বলছে, যদি দামেস্কে আবারও হামলা হয় তাহলে তারা দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে ইচ্ছুক।
তবে তারিফ বলছেন, সিরিয়ান দ্রুজদের রক্ষায় ইসরায়েলি সহযোগিতার প্রয়োজন হবে না। কারণ তারা সিরিয়ান হিসেবে অধিক সম্মানিত। এজন্য তাদের রক্ষার প্রয়োজন হবে না।
তারিফ আশা প্রকাশ করে বলেন, সিরিয়ার নতুন সরকার সকল সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে- দ্রুজ, খ্রিস্টান, কুর্দি, বেদুইন, ইয়াজিদি এবং আলাওয়াইতদের রক্ষায় কাজ করবেন।