Saturday, June 28, 2025

জন্মাষ্টমীর ব্যয় কমিয়ে বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ দেবে পূজা উদযাপন পরিষদ

আরও পড়ুন

সারা দেশে বন্যাপরিস্থিতির কারণে এ বছর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাব তিথি জন্মাষ্টমী আয়োজনের ব্যয় সংকোচন করে বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ ও অন্যান্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাব তিথি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

সভায় লিখিত বক্তব্যে সন্তোষ শর্মা বলেন, বাংলাদেশ স্মরণকালের ইতিহাসে এক অসাধারণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিজয়ের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। ছাত্র জনতাকে আমরা অভিবাদন। একই সঙ্গে যারা এই আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছেন, তাদের আত্মার সদগতি কামনা করি। আর যারা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের আশু আরোগ্য কামনা করছি। আমরা বিশ্বাস করি, বিজয়ের এই নতুন অধ্যায় সর্বস্তরে বিরাজমান বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে এক নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাবে। এছাড়া ৫ আগস্টের পূর্বাপর ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। এবার এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে জন্মাষ্টমী উদযাপিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রশাসনের অনুপস্থিতিতে এই-জনতার বিজয়কে কালিমালিপ্ত করতে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি তৎপর হয়ে ওঠে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় এক অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। তাদের বাড়িঘর, মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নির্যাতিত হন মহিলারা। অন্তত ৫২ টি জেলায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। তারই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ হয় শাহবাগে। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, এই পরিস্থিতিতে অনেক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির রক্ষায় স্বতঃস্ফুর্তভাবে পাহারা দিয়েছেন। আমাদের পাশে যারা এসে দাঁড়িয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, সিপিবি নেতৃবৃন্দ এবং বৈষম্যরিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এবার আমরা এক অবিশ্বরণীয় বিষয় প্রত্যক্ষ করেছি। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর প্রশাসনের অনুপস্থিতিতে রাজধানী ঢাকার শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ সারা দেশে মন্দির ও সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রক্ষায় স্বতঃস্ফুর্তভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতাকর্মীরা এগিয়ে এসেছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

আরও পড়ুনঃ  ১৮ বছর পর সিরাত সেমিনার হলো সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে

তিনি আরও বলেন ,অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের অব্যবহিত পর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ছুটে এসেছেন, পরে তার কার্যালয়ে পৃথক বৈঠকে আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশকে তিনি এক পরিবার হিসেবে দেখতে চান, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। এমন একটা রাষ্ট্র চাই, যেখানে মন্দির পাহারা দিতে হবে না। আমরা তার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছি। স্বাগত জানিয়েছি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ঐক্যের বার্তাকে। ছাত্র সমন্বয়করা বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার আগে তারা বুক পেতে দাঁড়াবেন। অন্তর্বর্তী সরকার, সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক দল ও ছাত্র নেতৃবৃন্দের আন্তরিক চেষ্টায় সাম্প্রদায়িক হামলার তীব্রতা কমে এলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এখনো চলছে, আমরা অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি। তবে এখন যেটা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে তা হলো নীরব চাঁদাবাজি, যার মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, নির্ধারিত অর্থ না দিলে তাদের বাড়িঘর, জায়গাজমি থাকবে না। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিন্দু শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা অবিলম্বে এ পরিস্থিতির অবসান দাবি করছি। এর মধ্যে আকস্মিকভাবে বন্যায় বৃহত্তর কুমিল্লা, বৃহত্তর নোয়াখালীসহ দেশের অন্তত ১০টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা এসব এলাকায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি। তারা ইতোমধ্যে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে সার্বিক বিষয়ে বিবেচনায় নিয়ে এবার ভাগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী প্রতি বছরের মতোই উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আরও পড়ুনঃ  লক্ষ্মীপুরে ৪০ জন কোরআনে হাফেজকে সম্মাননা

ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমী মিছিল/শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে, দেশ ও জাতির কল্যাণে বীতায়জ্ঞ, কীর্তন, কৃষ্ণপুজাও আলোচনা সভা যথানিয়মে অনুষ্ঠিত হবে। বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, সর্বভূতের মানুষ অনুষ্ঠানমালায় সংযুক্ত হবেন। আমরা বিশ্বাস করি, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মূল চেতনা ধারণ করে আমরা এগুতে পারলেই জন্মাষ্টমী উদযাপন সার্থক হবে। অন্ধকার দূর হবে, বিশ্ব আলোতিত হবে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন আমারা পূজা অঙ্গন থেকে দানব দলনের সূচনা করছি, আজও এই ধারা অব্যাহত আছে। আমরা মনে করি আসুরিক শক্তিকে করা ভগবৎ আরাধনারই অংশ। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে পশু শক্তির দাপটে ধরাধামে যখন ধর্মের গ্লানি পরিলক্ষিত হয়, অধর্মের উত্থান ঘটে তখনই সাধু-সজ্জন, নিপীড়িত-নির্যাতিত মানব জাতিকে রক্ষা ও অশুভ শক্তি বিনাশে শ্রীকৃষ্ণের অর্বিভাব ঘটে। সত্য সুন্দরের প্রতিষ্ঠাই ছিল ধরাধামে তার অবর্তীর্ণ হওয়ার কারণ।

আরও পড়ুনঃ  নতুন চাঁদ দেখার পর যে দোয়া পড়বেন

এবছর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষে দু’দিনব্যাপী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ২৬ আগস্ট সকাল ৮ টায় প্রতিবছরের মতো এবছরও দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রী শ্রী গীতাযজ্ঞ, বিকেল ৩টায় পলাশীর মোড় থেকে ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিল এবং রাতে তিথি অনুযায়ী কৃষ্ণ পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

এবছর ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অর্ন্তরবর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, উদ্বোধন করবেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

এই মিছিল পূর্বের মতোই নির্ধারিত সড়ক পরিক্রমা করে পুরোনো ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন ৩০ আগস্ট শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম. খালিদ হাসান। উদ্বোধন করবেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

সর্বশেষ সংবাদ