আশরাফুজ্জামান মিনহাজ ওরফে মিনহাজ উদ্দিন নিজেকে শুধু মামলা, নিয়োগ এবং বদলি বাণিজ্যের শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবেই পরিচয় দেন না, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক প্রভাবশালী লবিস্ট হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত তার ঘনিষ্ঠজন।
সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একাধিক ফোনালাপে তার প্রতারণার প্রমাণ উঠে আসে। এই অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়লে তিনি গা ঢাকা দেন।
মিনহাজ দাবি করেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার প্রভাব রয়েছে। তার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল দেখে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি তার প্রতি আকৃষ্ট হন। বিশেষভাবে, তিনি দাবি করেন, বিচারপতি থেকে শুরু করে সেনাপ্রধান পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা বসবেন, তা নির্ধারণে তার ভূমিকা রয়েছে। একটি পোস্টে তিনি দাবি করেন, “ওবায়দুল হাসানকে প্রধান বিচারপতি বানানোর ক্ষেত্রেও আমি ভূমিকা রেখেছি।”
ফাঁস হওয়া কথোপকথনে মিনহাজ উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর তার সুরক্ষার জন্য ভারত তাকে সহায়তা করেছিল। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে ১০ মিনিট সময় চান এবং তার বার্তাগুলো শুনে নোট নেন। পরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য কিছু করো, দেশের মানুষের জন্য কিছু করো।’” কথোপকথনে শেখ হাসিনা কান্নায় ভেঙে পড়েন, এমনকি তিনি মিনহাজের কাছে আরও কিছু বার্তা দেন।
মিনহাজ দাবি করেন, তার আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রও বিস্তৃত। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার জন্য নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকে অনুরোধ করেছিলেন। এছাড়া, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলেও দাবি করেন মিনহাজ। তার ভাষ্যমতে, ভারতের বিভিন্ন সংস্থা তাকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছে।
এছাড়া, মিনহাজ দাবি করেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও তার বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে এবং এমনকি ট্রাম্পের কিছু নীতিগত সিদ্ধান্তেও তিনি প্রভাব রেখেছেন। “ট্রাম্পের প্রথম টুইটটি কে লিখেছিল, সেটা কি বুঝতে পেরেছেন? আমি সেটা পরিচালনা করেছি,” এমনও দাবি করেন তিনি।
এছাড়া, মিনহাজ দাবি করেন, শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসনের জন্য ভারত, ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে একটি গোপন বৈঠক হয়েছিল, যেখানে তিনিও একটি ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ছিলেন।
তবে, এসব দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে এবং তার স্ত্রী, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাত জানিয়েছেন, আশরাফুজ্জামান মিনহাজ তার স্বামী।
মিনহাজের এসব দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।