Wednesday, July 23, 2025

ফিলিস্তিনিরা যেকারণে আরবদের বদলে তুরস্ক, ইরানের দিকে তাকিয়ে

আরও পড়ুন

ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলন বহু দশকের পুরোনো। একসময় আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ালেও, বর্তমানে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলোর নিষ্ক্রিয়তা ফিলিস্তিনিদের হতাশ করছে। ফলস্বরূপ, তারা এখন তুরস্ক ও ইরানের মতো দেশগুলোর দিকে আরও বেশি আস্থাশীল হয়ে উঠছে।

সৌদি আরব এখনও ইসরাইলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি, তবে গোপনে রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ইউএই ২০২০ সালে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের মাধ্যমে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় এবং বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামরিক চুক্তি চলছে। মিশর ও জর্ডান অনেক আগেই ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেছে এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে এখন আর বড় কোনো পদক্ষেপ নেয় না।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশ নিয়ে শঙ্কায় আছে চীন

বাহরাইন ও মরক্কোও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে। ফিলিস্তিনিদের আশা ছিল, আরব বিশ্ব তাদের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু এসব দেশের ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন তাদের আশাভঙ্গ করেছে। বর্তমানে তুরস্ক ও ইরানই একমাত্র মুসলিম দেশ, যারা সরাসরি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করছে।

তুরস্ক বরাবরই ফিলিস্তিনের পক্ষের দেশ হিসেবে পরিচিত। প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। তুরস্কের সরকার ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক, মানবিক ও সামরিকভাবে সহায়তা করছে। হামাসের নেতাদের তুরস্কে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুরস্ক ফিলিস্তিনের পক্ষে কূটনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  গাজায় গণহত্যা চালিয়ে ফেরার পর নিজেকে শেষে করে দিয়েছে ৪৪ সেনা

ইরান ইসরাইলের সবচেয়ে বড় বিরোধী দেশ। হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইসলামিক জিহাদের মতো গোষ্ঠীগুলোকে ইরান সরাসরি সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ও সর্বোচ্চ নেতা প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন। ইরান ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সরাসরি সামরিক সহযোগিতা দিচ্ছে। ইরান ফিলিস্তিনিদের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিচ্ছে, যা তাদের প্রতিরোধ যুদ্ধকে শক্তিশালী করছে।

আরব দেশগুলোর নিষ্ক্রিয়তা ও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ফিলিস্তিনিরা বিকল্প সমর্থন খুঁজছে। তুরস্ক ও ইরান সরাসরি ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিদের সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছে। হামাস ও ইসলামিক জিহাদের মতো গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যা ফিলিস্তিনিদের আত্মরক্ষার শক্তি জোগাচ্ছে। তুরস্ক আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা রাখছে।

আরও পড়ুনঃ  দলে দলে ছাত্রদলে যোগ দিচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, আরব দেশগুলো যদি ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের সমর্থন আরও দুর্বল করে, তাহলে তুরস্ক ও ইরানই ফিলিস্তিনিদের প্রধান আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে। তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে নতুন মেরুকরণের জন্ম দিচ্ছে, যেখানে একদিকে ইসরাইল-আরব জোট, আরেকদিকে ফিলিস্তিন-তুরস্ক-ইরান জোট গঠিত হচ্ছে। তুরস্ক ও ইরান এখন একমাত্র দেশ, যারা সরাসরি ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণকে আরও জটিল করে তুলছে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভবিষ্যতে তুরস্ক ও ইরানের ভূমিকা আরও কতটা শক্তিশালী হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ