Thursday, March 20, 2025

তেঁতুলিয়ায় উঁকি দিচ্ছে মায়াবী কাঞ্চনজঙ্ঘা

আরও পড়ুন

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় মেঘমুক্ত আকাশে উঁকি দিতে শুরু করেছে হিমালয়ের দ্বিতীয় উচ্চতম ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। মাঝেমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছবির মতো ভেসে উঠছে এ পর্বতশৃঙ্গটি।

এদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মৌহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে তেঁতুলিয়ায় পর্যটকের সমাগম ঘটছে প্রতিনিয়ত। পর্যটকরা এ অঞ্চলের পর্যটন স্পট ডাকবাংলোর পিকনিক কর্ণার ও মহানন্দা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে দেখছেন রূপশ্বৈর্য পর্বতমালা কাঞ্চনজঙ্ঘা। তারা দেখছেন, ছবি তুলছেন ও ভিডিও করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে, গত কয়েক দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় তেমন দেখা মিলছে না কাঞ্চনজঙ্ঘার। এজন্য অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরছে।

স্থানীয়রা জানায়, আকাশ পরিষ্কার হলে দেখা মিলবে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য। শরৎ, হেমন্ত ও শীতকালেই দেখা মেলে শ্বেতশুভ্র এই মহানায়কের। ভোরের আলো মেখে জাগতে শুরু করে সে। তারপর ক্ষণে ক্ষণে রং পালটাতে থাকে। ভোরের সূর্যের আভা ছড়িয়ে পড়লে কাঞ্চনজঙ্খা হয়ে ওঠে লাল টকটকে। দিন পেরোনোর সঙ্গে রং বদলাতে থাকে তার। কমলা, তারপর হলুদ আবার সাদা। অপার সৌন্দর্যের বিস্তৃতি ঘটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মনে হয় হাসছে পাহাড়। তার শরীর ঘেঁষে চলে গেছে বিস্তৃত হিমালয়। সবুজ ও কালো রং মেখে হিমালয়ও হয়ে ওঠে অপরূপ। তবে বর্তমান আবহাওয়ায় কখন পর্বতশৃঙ্গটির দেখা মিলবে বলা ভার। এই দেখা মিলছে আবার কয়েক দিন দেখা মেলে না।

আরও পড়ুনঃ  মহাদুর্নীতিবাজ ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী আশিক

জানা যায়, কাঞ্চনজঙ্ঘা পৃথিবীর তৃতীয় এবং হিমালয় পর্বতমালার দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা প্রায় ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট বা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার। এটি ভারতের সিকিম রাজ্যের সঙ্গে নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে চারটি নদীর উৎপত্তি ঘটেছে। নদীগুলি বাংলাদেশেও প্রবাহিত হয়। এখান থেকে এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব কাছে থাকায় খুব কাছ থেকে দেখা মেলে অপরূপ

প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যায়। ছবির মতো ভেসে ওঠা শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য ছাড়াও দেখা মেলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল।

আরও পড়ুনঃ  ড. ইউনূসকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

কয়েক দিন আগে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো পিকনিক কর্নারে ঘুরতে আসা নাহিদ ইসলামসহ ছয় জন জানান, ‘কয়েক দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছিল না। এতে আমরা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তবে শেষমেশ দেখা পেয়েছি কাঞ্চনজঙ্ঘার। এর অনুভূতি কী, তা বলে বোঝাতে পারব না। খুবই ভালো লেগেছে।’

রাজশাহী থেকে পরিবার নিয়ে আসা নাসিম জানান, সমতলের চা-বাগান ঘুরে দেখেছি। আর কয়েক দিন ধরেই ফেসবুকে চোখ রাখছিলাম ও খোঁজখবর রাখছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় কিনা। কিন্তু গত কয়েক দিনেও পর্বতশৃঙ্গটি দেখতে না পেয়ে খারাপ লাগছে। একই কথা জানান, পায়রা বেগম ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।

আরও পড়ুনঃ  আনসারদের আন্দোলন নিয়ে যা বললেন মিজানুর রহমান আজহারী

এদিকে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ ও পর্যটন ঘিরে গড়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারিভাবে আবাসন ব্যবস্থা। ফলে কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘিরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। নাট্যদল ভূমিজ প্রতি বছর আয়োজন করছে কাঞ্চনজঙ্জ্জা পালাটিয়া উৎসব।

ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক কে এম আজিমিরুজ্জামান জানান, পর্যটকদের জন্য আমরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের কন্টাক্ট নম্বরগুলি বিভিন্ন জায়গায় বিল বোর্ডেও প্রদর্শন করেছি। যাতে যে কোনো প্রয়োজনে পর্যটকরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। জরুরি ফোন এলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি জানান, ‘পর্যটকদের জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য আমরা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট আছি।

সর্বশেষ সংবাদ