Monday, December 23, 2024

মাশরাফির আসনে প্রার্থী হওয়ায় হামলার শিকার হন জামায়াত নেতা

আরও পড়ুন

মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নড়াইল-২ আসনে নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ায় জেলা জামায়াতের আমির আতাউর রহমান বাচ্চুর ওপর হামলার অভিযোগ উঠে এসেছে তারই ফেসবুক পোস্টে। ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর হওয়া এ হামলার স্মৃতি উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন ভুক্তভোগী নিজেই। সম্প্রতি নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে মাশরাফীর অনুসারী গ্রুপের জেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কর্তৃক হামলার এ দুঃসহ ঘটনা উঠে এসেছে তার পোস্টে৷ এ পোস্টকে ঘিরে নড়াইলের রাজনৈতিক মহলে চলছে নিন্দা। পোস্টে হামলা ও পিস্তল দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপ্নীল শিকদার নীল ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি আশরাফুজ্জামান মুকুলের বিরুদ্ধে।

পাঠাকদের উদ্দেশ্যে পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

“মাশরাফি ভাইয়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন করবি” !!!?

২০২২ সালের ২০ অক্টোবর লোহাগাড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের একটি সীরাত মাহফিল থেকে জেলা সদরে ফেরার সময় রাত ৯ টায় শহরের গা ঘেঁষে বহমান চিত্রা নদীর তীরে চা পানের উদ্দেশ্য বসলাম।

কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি কিছু যুবক ছেলে এসে সিগারেট হাতে নিয়ে অস্বাভাবিক অবস্থায় আমার সামনে বসলো। একটি ছেলে বলল, আমকে চেনেন? আমি ছাত্রলীগের জেলা সেক্রেটারি নীল। আমি বললাম ও আচ্ছা তোমার নাম শুনেছি, কিন্তু সরাসরি দেখা হয়নি। তারপর সে নিজের ফেসবুক আইডিতে ঢুকে আমার একটি ছবি বের করে বললো আপনি কি এমপি নির্বাচন করবেন? আমি বললাম, হ্যা আমার সংগঠন আমাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে পরিবেশ হলে অবশ্যই করবো। সে বলল আপনাদের নিবন্ধন নেই কিভাবে নির্বাচন করবেন? আমি বললাম, নিবন্ধন ফিরে পাবো আশাকরি, আর না হলে স্বতন্ত্র করবো। তারপর ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি মুকুল ও অন্যরা কয়েকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বলতে লাগলো মাশরাফি ভাইয়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন করবি এত সাহস কথা থেকে আসে, তোকে অনেক দিন ধরে খুঁজতেছি কিন্তু পায় না এই বলেই হাত থেকে ফোনটা নিয়ে মাটিতে আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলল এবং আমাকে চায়ের দোকান থেকে ধরে নিয়ে পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে চললো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হলো আঘাতের পর আঘাত মুকুল অস্ত্র মাথায় ধরে বললো আর নির্বাচনের কথা বলবি কিনা? আমি বললাম আমার সংগঠন যে নির্দেশ দেয় আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। ইতোমধ্যে জেলা সেক্রেটারি ওবায়দুল্লাহ ভাই (সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান) সেখানে উপস্থিত হয়ে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করে তাদেরকে নিবৃত করার চেষ্টা করছে। তখন তারা ওবায়দুল্লাহ ভাইয়ের উপর আক্রমণ শুরু করলো।

এক পর্যায়ে মুখের ভিতর পিস্তল ঢুকিয়ে গুলি করতে উদ্যত হলো। অন্য আরেক জন পিস্তলের বাট দিয়ে ওবায়দুল্লাহ ভাইয়ের মাথায় প্রচন্ড আঘাত করলো। বুঝে উঠার আগেই কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনা গুলো ঘটে গেল। পরবর্তীতে স্থানীয় জনতা ও দোকানদারদের প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হটলো। রক্তাক্ত দেহ ও ছেড়া জামা কাপড় নিয়ে বাসায় এসে পৌঁছালাম। এই ঘটনা তখন শুধুমাত্র জেলার কয়েকজন দায়িত্বশীল জানতেন। পরিবেশ এমন ছিল অন্য সকল জনশক্তি জানতে পারলে তারা হয়ত প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠতো এবং পুলিশ প্রশাসন ও ছাত্রলীগের রোষানলের স্বীকার হতো। সেদিন শুধুমাত্র মহান রবের নিকট বিচার দিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আশার চেয়ে প্রাপ্তি একটু বেশিই হয়ে গেছে। নিশ্চয় মহান আল্লাহ ন্যায় বিচারক।

সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় আওড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনার সময় আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। জামায়াতের জেলা আমির আতাউর রহমান বাচ্চু ও সেক্রেটারি ওবায়দুল্লাহ কায়সার সেই রাতে চিত্রাসেতু এলাকায় বসে চা পান করছিল। হঠাৎই সেখানে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপ্নীল শিকদার নীল ও সাবেক সভাপতি আশরাফুজ্জামান মুকুলসহ ১০-১৫ জন ছেলে এসে তাদের দু’জনকে মারতে মারতে ঝোপের আড়ালে নিয়ে যায়। এরইমধ্যে করে তাদের একজন ওবায়দুল্লাহ কায়সারকে গুলি করতে পিস্তল ঠেকায়। এসময় কিছু লোক গিয়ে ওই অস্ত্রধারীকে আঘাত করে ওবায়দুল্লা কায়সারকে রক্ষা করে।

এদিকে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে ভুক্তভোগী জেলা জামায়াতের আমির আতাউর রহমান বাচ্চু বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে একটা সিদ্ধান্ত নিবো।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ