Tuesday, March 18, 2025

ঢাকা মেডিকেলে অনেক লাশের মধ্যে পড়ে ছিল শহীদ রনির লাশ

আরও পড়ুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা মেডিকেলে অসংখ্য লাশের মধ্যে পড়ে ছিল শহীদ মো. রনির লাশ। প্রায় দেড়ঘণ্টা ধরে খোঁজাখুঁজির পর মেডিকেলের ইমার্জেন্সি বিভাগের উত্তর পাশে বেশকিছু লাশের মধ্যে মিলল তার লাশ। পুরো মেডিকেলজুড়ে ছিল অনেক লাশ ও আহত মানুষের আহাজারি।

সেদিন শহিদ রনির লাশ শনাক্তকারী তার চাচা আমির হোসেন মুঠোফোনে বাসসকে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, রনির বাবা ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. হারুন আমার চাচাতো ভাই। রনি রাজধানীতে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। গত ৫ আগস্ট বিকেলে আমাকে জানানো হয় রনির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে রয়েছে। রাতে সেখানে গিয়ে প্রায় দেড়ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর মেডিকেলের ইর্মাজেন্সি বিভাগের উত্তর পাশের একটি স্থানে ১৬টি লাশের মধ্য থেকে শহিদ রনির গুলিবিদ্ধ লাশ শনাক্ত করি।

ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বালিয়া গ্রামের কৃষক মো. হারুনের দ্বিতীয় ছেলে মো. রনি (২২)। পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে গত প্রায় বছরখানেক হলো রনি ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ নেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কর্মস্থল থেকে লাশ হয়ে ফিরতে হলে তাকে। রনির এই অকালমৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে পরিবারের অন্যান্য সদস্য। এখনো পরিবারটিতে চলছে শোকের মাতম।

আরও পড়ুনঃ  বায়তুল মোকাররম মসজিদে নতুন খতিব নিযুক্ত

সরেজমিনে শহিদ রনির বালিয়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা হারুন ও মা মাহিনুর এখনো কাঁদছেন ছেলের জন্য। রনির বড় ভাই রাকিব কুমিল্লায় রাজমিস্ত্রির কাজ করত। ভাইয়ের মৃত্যুতে সে বাড়িতে চলে এসেছে। ছোট বোন নূপুর স্থানীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এ ছাড়া আরো এক বোন সুমি বেগম থাকেন শ্বশুরবাড়িতে।

শহিদ রনির পিতা মো. হারুন বলেন, রনি ঢাকার গুলিস্তান এলাকার একটি মেসে থাকত। গত ৫ আগস্ট রনি কাজে যায়নি। সকাল দশটার দিকে রনি আমাকে মুঠোফোনে বলে, আব্বা ঘর থেকে বের হইয়েন না, ঢাকার অবস্থা খুব খারাপ। এখনো নিচে নেমে খাবার খেতে যেতে পারিনি। তখন রনির পিতা বলেন, আমরা ঠিক আছি, তুমি কিন্তু নিচে নেমো না, ঘর থেকে বের হইও না বাবা। এটাই ছিল ছেলের সঙ্গে আমার শেষ কথা।

আরও পড়ুনঃ  দেখা গেল শামীম ওসমানকে, বারণ করলেন ছবি তুলতে

রনির পিতা আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত বেলা ১১টার দিকে রনিসহ কয়েকজন নিচে খাবার খেতে নামে। খাওয়া শেষে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয় রনি। তার তলপেটে একটি গুলি লাগে। পরে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে জানতে পারি ছেলের মৃত্যুর খবর।

তিনি বলেন, পরে ঢাকায় বসবাস করা আমার চাচাতো ভাই আমির হোসেনকে জানালে সে রাতেই রনির লাশ নিয়ে ভোলার উদ্দেশ্যে রওনা করে। পরদিন সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে তাকে দাফন করি।

রনির বড় ভাই মো. রাকিব বলেন, গুলিস্তানে রনি যখন গোলাগুলির মধ্যে পড়ে,তখন তার সঙ্গে যারা ছিল সবাই দিগ্‌বিদিক হয়ে ছোটে। রনির গায়ে কীভাবে গুলি লাগে কিংবা কারা হাসপাতালে নিয়ে যায় আমরা সেসব কিছুই জানতে পারিনি। শুধু দুপুরে আমাদের জানানো হয় রনির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  কোটা কি তাহলে রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

রনির মা মাহিনুর বলেন, রনির বাবার বয়স হয়েছে, তাই আগের মতো কাজ করতে পারে না। তাদের দুই ছেলে রাকিব ও রনি রাজমিস্ত্রির কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠাত। সেই টাকায় তাদের সংসার চলত। রনির এমন অকালমৃত্যুতে তাদের পরিবারের আয়ের বড় একটি খাত বন্ধ হয়ে গেল। বর্তমানে পরিবারে আর্থিক দুরবস্থা দেখা দিয়েছে। তাই সরকারি সহায়তা প্রত্যাশা করছেন তিনি।

রনিদের প্রতিবেশী ফজলুর রহমান বলেন, পরিবারের ছোট ছেলে রনিকে হারিয়ে তার বাবা অনেকটাই পাগলপ্রায়। সারাদিন ঘরেই থাকে। সরকার যদি পরিবারটির পাশে দাঁড়ায় তাহলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

সর্বশেষ সংবাদ