আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারা দেশে অনেকটা গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে। সংগঠনের কাউকে ক্যাম্পাসের প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে দেখা না গেলেও সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছেন সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণেও রাখেন ভূমিকা। সার্বিক বিষয়ে তিনি কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাবি প্রতিনিধি মো. জাফর আলী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির হঠাৎ প্রকাশ্যে আসার কারণ কী?
সাদিক কায়েম: চব্বিশের ইনকিলাব বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিয়ে এসেছে। গত ১৫ বছরে জুলুমের প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ বা পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল না। প্রতিবাদ করলেই জেল-জুলুম, গুম-খুন, ফাঁসি-ক্রসফায়ারসহ নানা হয়রানির মুখে পড়তে হতো। তাছাড়া ফ্যাসিবাদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশে ছাত্রলীগের রাজনীতির বৈধতা নিয়ে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
সাদিক কায়েম: নয়া ইনকিলাবের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান সফলতারা মুখ দেখেছে দেশের সর্বস্তরের মানুষের একটি সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে। এই চুক্তির চেতনাই ছিল দেশদ্রোহী স্বৈরাচারী শক্তি ও এর দোসরদের হঠানো। সে পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে ছাত্রলীগ নিজ কৃতকর্মের কারণে এদেশে তাদের সেই একতরফা, ধ্বংসাত্মক ও সহিংসতার রাজনীতি করার বৈধতা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি উভয়ই হারিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের ও তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন কিনা?
সাদিক কায়েম: ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্রছাত্রীদের ওপর গত ১৫ জুলাই যে হামলা চালিয়েছে সেটা বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির রক্তাক্ত ইতিহাস বিচারেও অত্যধিক ভয়ংকর। এই হামলায় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল। তৎকালীন ফ্যাসিবাদের দোসর প্রশাসনকে অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়নে আপনাদের ভূমিকা কি হবে?
সাদিক কায়েম: ইনকিলাবের চেতনা বলতে আমরা বুঝি ফ্যাসিবাদের বিনাশ সাধন। ফ্যাসিবাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার আগে সমাজে মাথাচাড়া দেয়। কাজেই ফ্যাসিস্ট প্রবণতা যেন সমাজে তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখব। তবেই সর্বপ্রকার বৈষম্যের সমূল উৎখাত হবে। অতীতে আমাদের ভুল-সীমাবদ্ধতা কি ছিল সেগুলোরও পর্যালোচনা দরকার। জুলাই ইনকিলাবের ও ফ্যাসিবাদের ভয়াবহতার স্মৃতি সংরক্ষণ হবে আমাদের অন্যতম প্রায়োরিটি।
শিক্ষার্থীরা কেন আপনাদের সমর্থন করবে? আর তাদের কাছে আপনাদের কী প্রত্যাশা?
সাদিক কায়েম: বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সুস্পষ্ট মতাদর্শ আছে। আমাদের আদর্শ ও কাজই হবে সবচেয়ে বড় দাওয়াত। আমরা চেষ্টা করব আমাদের আইডিয়াটি ছাত্রসমাজের কাছে উপস্থাপন করার। যদি আমরা শিক্ষার্থীদের কনভিন্স করতে পারি, আমরা যে আইডিয়াটি পেশ করছি সেটি গ্রহণযোগ্য এবং আমাদের কথা ও কাজ সঙ্গতিপূর্ণ, তাহলে তারা আমাদের সমর্থন করবে না কেন?
কেউ কেউ বলছেন, শিবির এতদিন গুপ্ত ও অনুপ্রবেশের রাজনীতি করেছে। এই মন্তব্য কীভাবে দেখছেন?
সাদিক কায়েম: বিগত ১৬ বছর ছাত্রলীগের সবচেয়ে বর্বরোচিত হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এরকম একটি মজলুম সংগঠনকে জড়িয়ে এ জাতীয় বক্তব্য ভয়াবহ রকমের বিভ্রান্তিমূলক। মূলত পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি আমাদের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ জাতীয় প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। আমরা সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।