উপাসনালয়ে যারা হামলা করে তারা মানুষ নয়, পশু; এরা দুষ্কৃতকারী বলে মন্তব্য করেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, দেশে অসাম্প্রদায়িক আবহ কোনোভাবেই নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না। আমাদের এই সরকারকে বিব্রত করার জন্য একশ্রেণির মতলবী মানুষ মাঠে নেমেছে। এদের আমাদের রুখতে হবে।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহাবতার ভগবান শ্রী কৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও পূজা উদযাপন পরিষদ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনা সভায় বক্তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সরকারের আছে আট দফা দাবি তুলে ধরে।
তিনি বলেন, আমরা সবাই দেশের নাগরিক। দেশের একজন মুসলমান ক্ষতিগ্রস্ত হলে রাষ্ট্র দায়ী, তেমনি অন্য ধর্মের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রাষ্ট্র দায়ী। সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সুন্দর সমাজ জাতিকে উপহার দিতে চাই। আমি যতদিন পারি দেশের সব ধর্মের মানুষের সেবা করে যেতে চাই। আপনারা আমার উপর আস্থা রাখতে পারেন।
তিনি বলেন, আমরা কতদিন দায়িত্ব পালন করব তা বলা মুশকিল। আমরা কিছু সংস্কার করতে চাই। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চাই। তারপর আমরা ইলেকশন কমিশনকে সাজিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে চাই।
আলোচনায় অংশ নিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর আট আগস্ট পর্যন্ত যখন সরকার ছিল না, তখন কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের অর্জন ম্লান করতে মন্দিরে হামলা করেছে। কিন্তু জনগণ তা রুখে দিয়েছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আমাদের মধ্যে ঐক্য অটুট রাখতে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বা বাংলাদেশের শেষ দিন পর্যন্ত তা রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর।
আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবের কথা উল্লেখ করে এ উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের মধ্যে দুর্গাপুজা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। পূজার আয়োজন বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যারা এ দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করবে- িপরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি বা অন্য যে কেউ যদি এ ধরনের ষড়যন্ত্রে
লিপ্ত হয় এ সরকার তাদের ছাড়বে না। প্রতিটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা ও এর পেছনে যারা ইন্ধনদাতা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সরকার নিশ্চিত করবে- এই প্রতিজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের অর্জনকে ম্লান করতে কোনো ষড়যন্ত্র যেন কেউ সফল করতে না পারে, সেজন্য আমরা কাজ করে যাব। এই অগ্রযাত্রায় সব নাগরিক লড়াইয়ে অংশ নেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
জুলাই বিপ্লবের পর আলোর দিকে যাত্রায় আমরা দেশে আর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেখতে চাইনি এ কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, আমরা চাই সমাজ পরিবর্তন হবে। সব ধরনের বৈষম্যের অবসান হবে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় উপদেষ্টাদের কাছে দেওয়া আট দফা দাবির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, আপনাদের কাছে দেওয়া আট দফার প্রতি আপনারা যত্নশীল হবেন।
তিনি বলেন, গত ৫৩ বছরে একটি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিচার হয়নি। জুলাই বিপ্লবের পরও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন আপনারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংকট সমাধানে কাজ করবেন, প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার করবেন। আমরা চাই দেশে আপনার-আমার সাংবিধানিক অধিকার সমান হবে। আমরা সমঅধিকার ও বিচার চাই।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব।