Thursday, June 26, 2025

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অর্ধশত হত্যা মামলা

আরও পড়ুন

কোটা সংস্কার আন্দোলন দমাতে সারা দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ৫৮০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। নির্বিচারে এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সারা দেশে মামলা হচ্ছে। এর বেশিরভাগই হচ্ছে হত্যা মামলা। এ ছাড়া হত্যাচেষ্টা, নির্যাতনসহ নানা ফৌজদারি অপরাধে মামলাগুলো করছেন সংক্ষুব্ধরা। ইতোমধ্যে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সারা দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত অর্ধশত হত্যা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে সাতটি।

গণহত্যার অভিযোগগুলোর ওপর তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। বাকি মামলাগুলোর তদন্ত করছে থানা পুলিশ। এসব হত্যা ও গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতা রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। আসামি করা হয়েছে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক, ব্যারপ্রধান, ডিবিপ্রধান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। পাশাপাশি সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার সাবেক এমপি এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের অন্তত ১৫ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  উন্নতির দিকে বন্যা

গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দুপুরে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর মুদি দোকানদার আবু সায়েদকে (৪৫) হত্যার অভিযোগ এনে এস এম আমীর হামজা নামে এক ব্যক্তি গত ১৩ আগস্ট সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এটিই ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া প্রথম হত্যা মামলা। এ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারকে আসামি করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  গোপালগঞ্জের সোহাগ একসঙ্গে দুই সরকারি চাকরি করেন

এরপর ১৪ আগস্ট ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের নিহত শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজন হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের নামে মামলা করা হয়। এদিন শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গুম করে নির্যাতনের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা। ১৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি হত্যা মামলা হয়। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মাদ্রাসাছাত্র শিশু জোবাইদ হোসেন ইমনকে (১২) র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা এবং শেরেবাংলা নগরে অটোরিকশাচালক সাহাবুদ্দিন পুলিশের গুলিতে খুন হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে মামলা দুটি করা হয়। শেখ হাসিনা ছাড়াও আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়।

১৬ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মিরপুরে মো. সিফাত হোসেন (২৬) নামে এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। এতে অজ্ঞাতনামা বহু নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ায় সেলিম হোসেন (৪০) নামে এক শিক্ষক নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ১০১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৪৫১ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  আওয়ামী লীগের ৯০ ভাগ নেতাই দুর্নীতিতে জড়িত: সোহেল তাজ

অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় দাখিল করা হয়। তিনটির মধ্যে ঢাকার ঘটনা নিয়ে দুটি ও চট্টগ্রামের ঘটনা নিয়ে অপর অভিযোগটি করা হয়েছে। এসব অভিযোগে বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নামও রয়েছে।

সারা দেশে আসামি অন্তত ১৫ হাজার: গত ১৩ আগস্টের পর থেকে ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশে মামলা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে সারা দেশে ৫ শতাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলার বেশিরভাগই হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও নির্যাতনের অভিযোগে। এসব মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মী আসামি হয়েছে। এর মধ্যে গত ১৯ আগস্ট এক দিনেই অন্তত সাড়ে ৬ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ২১ আগস্ট আরও ১৩টি মামলা হয়। এসব মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, মেয়র, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় আড়াই হাজার জনকে আসামি করা হয়।

সর্বশেষ সংবাদ