Saturday, June 28, 2025

নাফিসা কামালসহ ৩ এমপির বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান

আরও পড়ুন

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামাল ও তার মেয়ে নাফিসা কামালসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (১৮ আগস্ট) তাদের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক মোহা. নূরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামাল, মেয়ে নাফিসা কামাল, ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী এবং ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজির আহমেদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চক্রে ঢুকে রমরমা ব্যবসা সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বিদেশে কর্মী পাঠাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড নামে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেন। লাইসেন্স নেওয়ার সাড়ে তিন বছরে মাত্র ১০০ কর্মী বিদেশে পাঠায় তারা। ‘মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটে’ বা চক্রে যোগ দেওয়ার পর গত দেড় বছরে দেশটিতে প্রায় ৮ হাজার কর্মী গেছেন নিজাম হাজারীর এজেন্সির নামে। মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বেশি কর্মী পাঠানো এজেন্সির তালিকায় ৪ নম্বর স্থান পেয়েছে স্নিগ্ধা ওভারসিজ।

আরও পড়ুনঃ  সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে আবারও তরুণরা গর্জে উঠবে : সোহেল তাজ

ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী ২০১৫ সালে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেন। মালয়েশিয়ায় এককভাবে শ্রমিক পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি মধ্যপ্রাচ্যে আড়াই হাজারের মতো কর্মী পাঠিয়েছে। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে এ এজেন্সি একাই ছাড়পত্র নিয়েছে ৮ হাজার ৫৯২ কর্মীর।

ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজির আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর দিক দিয়ে পঞ্চম অবস্থান রয়েছে। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খোলার আগে তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম ছিল না। বিদেশে পাঠিয়েছিল মাত্র ২৩৮ কর্মী। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে তারা শীর্ষ তালিকায় চলে যায়। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গেছেন ৭ হাজার ৮৪৯ কর্মী। চক্র গঠনের সময় বেনজীর ছিলেন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি।

আরও পড়ুনঃ  তরমুজ বিক্রেতা রনির মিলিনিয়র ছবি ভাইরাল যা বলছে ফ্যাক্টচেক

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ ও মেয়ে নাফিসা কামালের অরবিটালস ইন্টারন্যাশনালের নামে মালয়েশিয়ায় গেছেন মোট ৯ হাজার ৮৬১ জন। চক্র গঠনের সময় আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, তিন সংসদ সদস্য ও একজন সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্যের এজেন্সির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর এবং এ খাতের নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান বিপুলসংখ্যক কর্মী পাঠাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ কর্মী পাঠায়। তবে বাংলাদেশ ছাড়া কোনো দেশে এমন চক্র-ব্যবস্থা নেই। চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত। চক্রে থাকা এজেন্সিগুলো বসে বসে প্রতি কর্মীর বিপরীতে অন্তত দেড় লাখ টাকা ‘চক্র ফি’ পাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে : সেনাপ্রধান

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের অন্যান্য এজেন্সির মধ্যে অন্যতম হলো- ঐশী ইন্টারন্যাশনাল, নিউ এজ ইন্টারন্যাশনাল, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, বিএনএস ওভারসিজ লিমিটেড, পিআর ওভারসিজ, সাদিয়া ইন্টারন্যাশনাল, ইম্পেরিয়াল ওভারসিজ, বিএম ট্রাভেলস লিমিটেড এবং অপূর্ব রিক্রুটিং এজেন্সি।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার-নির্ধারিত জনপ্রতি ব্যয় ৭৯ হাজার টাকা। কিন্তু মালয়েশিয়া যেতে গড়ে একজন বাংলাদেশি কর্মী খরচ করেছেন ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। দেড় বছরে সাড়ে ৪ লাখের মতো লোক পাঠিয়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে এ খাতে। সরকার নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে বেশি নেওয়া হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জনপ্রতি দেড় লাখ টাকা করে চক্র ফি নেওয়া হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সর্বশেষ সংবাদ