Wednesday, March 19, 2025

মহাদুর্নীতিবাজ ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী আশিক

আরও পড়ুন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন সংস্থাটির সব প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, দীর্ঘ বছর ধরে দুর্নীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এই প্রকৌশলী। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুচ্ছ কারণে মারধর, রাষ্ট্রবিরোধী মামলা দায়ের, ফাইল আটকিয়ে ঘুষ গ্রহণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে দুদিন ধরে প্রধান প্রকৌশলীকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিলেও গতকাল রোববার বিক্ষুব্ধ প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন।

ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই নানা দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এমনকি ওয়ান-ইলেভেনের সময়কালে গঠিত টাস্কফোর্স আশিককে দক্ষিণ সিটির ১ নম্বর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষণা করে। এর পরও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুকৌশলে সরকারি দলের নেতাদের ম্যানেজ করে বাগিয়ে নেন একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পদ। দায়িত্ব পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালকের পদেও।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, সহকারী প্রকৌশলী পদ থেকে মাত্র এক দিনের মধ্যেই নির্বাহী প্রকৌশলী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পান আশিকুর রহমান। এমনকি সর্বশেষ গত দুই বছর আগে নিয়মবহির্ভূতভাবে বাগিয়ে নেন প্রধান প্রকৌশলীর পদও।

আরও পড়ুনঃ  জন্মদিনে কী দিবা আপু...

জানা যায়, ফ্লাইওভার প্রকল্পে দুর্নীতির আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক আশিক। ওই সময় নির্মাণ প্রকল্প ব্যয় ৮শ কোটি টাকা ছিল। প্রকল্প পরিচালক সেই ব্যয় প্রায় ২২শ কোটি টাকা করেন। এ ছাড়া মতিঝিল সিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পে অসম চুক্তি করেন। এই প্রকল্পে ৭৮ ভাগ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এবং মাত্র ২২ ভাগ পায় সিটি করপোরেশন। এমন অসম চুক্তি করলেও আশিকুরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একই ধরনের আরেকটি প্রকল্প সানমুন টাওয়ার নির্মাণ। এই প্রকল্পে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান পায় ৭৫ ভাগ এবং করপোরেশন পায় ২৫ ভাগ। পরবর্তী সময়ে এই ঘটনায় মামলা হয় তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শিহাবউল্লাহর বিরুদ্ধে। ওই মামলায় দীর্ঘদিন জেল খাটেন প্রকল্প পরিচালক। একই ধরনের দুর্নীতি করেও রেহাই পেয়ে যান সিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আশিকুর রহমান।

আরও পড়ুনঃ  পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সেই কূপ থেকে দিনে পাওয়া যাচ্ছে ৮০ লাখ ঘনফুট গ্যাস

কেবল সিটি করপোরেশনই নয়, এর আগে তিনি বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনে পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে চাকরি করেছেন। সেখানেও জড়িয়েছেন দুর্নীতিতে। সেই দুর্নীতির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়। সেই তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এ ছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরিচালক পদে থাকার সময়েও জড়িয়েছেন এ প্রকৌশলী।

দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের পাশাপাশি প্রধান প্রকৌশলী আশিক রাজধানীর অভিজাত এলাকায় গড়ে তুলেছেন একাধিক বাড়ি এবং ফ্ল্যাট। রয়েছে বেশ কয়েকটি আলিশান গাড়িও।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে এমন অনিয়ম চলে এলেও ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ আশিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারদের ফাইল আটকিয়ে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টিও ছিল ওপেন সিক্রেট। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার মেয়রের কাছে অভিযোগও করেছিলেন। এক পর্যায়ে ছয় মাস ধরে ঠিকাদাররা দক্ষিণ সিটির উন্নয়ন কাজও বন্ধ করে দেন। ফলে ঠিকাদার খুঁজতে একটি কাজের বিপরীতে অনেকবার করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হয়।

আরও পড়ুনঃ  বাকৃবি ছাত্রলীগের যুদ্ধ ঘোষণা

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার করপোরেশনের প্রায় সব প্রকৌশলী এবং কর্মকর্তারা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যান। এ সময় গতকাল রোববারের মধ্যে আশিকুর রহমানকে চাকরিচ্যুত কিংবা পদত্যাগের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। জানা যায়, কয়েকদিন ধরেই অফিস করেন না আশিক। এর আগে তার রুমের সামনে লাগানো নেমপ্লেট ভাঙচুর করা হয়। সেখানে বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা আশিকুর রহমানের প্রবেশ নিষেধ স্টিকার লাগিয়ে দেন।

এরপর গতকাল ফের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা দেখা করতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের কাছে যান। এ সময় দক্ষিণ সিটির নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ ঘোষণা দেন প্রধান প্রকৌশলী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা কর্মবিরতিতে যাবেন।

এ বিষয়ে জানতে আশিকুর রহমানকে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে ফোন কেটে দেন। পরে আবার ফোন করলে অন্য একজন ফোন রিসিভ করেন এবং জানান আশিকুর ফোনের কাছে নেই।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর তার হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন লিখে পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।

সর্বশেষ সংবাদ