টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে জোবায়ের ও সাদপন্থিদের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষের পর উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই সংঘর্ষের জন্য পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছেন তাবলীগের দুই পক্ষের আলেমগণ। সংঘর্ষের পর বুধবার সকাল থেকেই তাবলীগ জামায়াতের কাকরাইলের মারকাজ মসজিদে অবস্থান নেন জুবায়েরপন্থিরা। বর্তমানে তাদের দখলেই রয়েছে মসজিদটি। সেখানে সাদপন্থিদের কাউকে দেখা যায়নি। টঙ্গীতে সংঘর্ষের পর বুধবার সকাল থেকেই কাকরাইল মসজিদ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদিন বিকালে জুবায়েরপন্থিদের শীর্ষ মুরুব্বি মুফতি আমানুল হক বাংলাদেশে এককভাবে ইজতেমা করার ঘোষণা দেন। কাকরাইলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটাই ইজতেমা হবে।
সরকারও এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করবে। এতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না।
সংবাদ সম্মেলনের আগে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন জুবায়েরপন্থিদের শীর্ষ মুরুব্বিরা। বৈঠক শেষে কাকরাইল মসজিদে এসে মুফতি আমানুল হক বলেন, রাতের আঁধারে লেবাসধারী সাদপন্থি হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা ধারালো চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের চার শতাধিক মুসল্লি আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতের সঠিক সংখ্যা এখনো বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
ইজতেমা ময়দান অভিমুখী লংমার্চের ঘোষণা দিয়ে মুফতি আমানুল হক বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে যদি সাদিয়ানি বাহিনী মাঠ ছেড়ে না দেয় তাহলে সারা দেশ ও ঢাকার ৮ পয়েন্ট থেকে আমরা লংমার্চ করে টঙ্গীর মাঠে গিয়ে সমবেত হয়ে জোহরের নামাজ আদায় করবো। তারা যদি মাঠ ছেড়ে দেয় আমরা লং মার্চ না করলেও তাদের নামে হত্যা মামলা করবো। আমরা তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাই। এ সময় ওয়াসিফুল ইসলাম, ওসামা, আব্দুল্লাহ মনসুর, আজিম উদ্দিনসহ মোট ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তাবলীগ জামায়াতের এই শীর্ষ মুরুব্বি। তিনি বলেন, সরকার তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক, যাতে তারা আর এমন ফেতনা না করতে পারে। বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য বর্তমান সরকারকে একটা বিপদের মুখে ফেলে দেয়ার চক্রান্তের বীজ হলো সাদিয়ানি বাহিনী। তারা ভারতের দ্বারা ব্যবহার হচ্ছে। কারণ তাদের আমীর ভারতের। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাই, তাদের বিচার করা হোক। এই কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীতে কেয়ামত পর্যন্ত আর কোনো সাদিয়ানিকে আসতে দেয়া হবে না।
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, জামায়াতে তাবলীগের বিভক্তিটা মূলত আমাদের দেশের নয়। এই বিভক্তিটা হলো ভারতের। সারা বিশ্বে দাওয়াতে তাবলীগের কাজ এক হয়ে চলছিল। কিন্তু মাওলানা সাদ সাহেবকে কেন্দ্র করে বিশ্বের প্রতিটি দেশ, শহর, নগর, মসজিদ এবং বাড়িতে বিভক্তি হয়েছে। দাওয়াতে তাবলীগের প্রতিটি ঘর তার কারণে বিভক্ত। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি বলেন, গত ২৯শে নভেম্বর থেকে ৩রা ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের পাঁচদিনের জোর (কর্মী সম্মেলন) ছিল। আমাদের জোর করার পর তাদের (সাদপন্থি) জোর করার ইচ্ছা হয়। তারা আমাদের জানায়, তারাও জোর করবে। আমাদের কাছে প্রশাসনিক প্রজ্ঞাপন ছিল, ইজতেমা মাঠ আমাদের কাছে থাকবে। ৩১শে জানুয়ারি, ১লা ও ২রা ফেব্রুয়ারি আমরা ইজতেমা করবো এবং ৪ঠা ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় আমরা সরকারের কাছে মাঠ হস্তান্তর করবো। সরকার তাদেরকে ইজতেমা করার সুযোগ দেবে। পরে আবার মাঠ আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, এজন্য সরকার চিন্তা করেছিল আমাদের সঙ্গে বসবে। আমাদের কাছে অনুমতি চাইবে। তাই সরকার হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে তাদের কাছে পাঠায়। ওয়াসিফুল ইসলাম, তার ছেলে ওসামা, আব্দুল্লাহ মনসুরসহ কয়েকজন সমন্বয়কদের সঙ্গে একটা বৈঠক করে। সেখানে সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ তাদের আশ্বস্ত করেন, তারা প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মাঠ নিয়ে দেয়া হবে। এজন্য আগামী ২০ তারিখ থেকে পাঁচদিনের জোর (কর্মী সম্মেলন) করে মাঠ আবার ফেরত দিয়ে দেয়ার শর্ত দেয়া হয়। এতে তারা সম্মতি জানায়। এর ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার শেষ রাতে সারজিস ও হাসনাত কাকরাইল মসজিদে আসে আমাদের মুরুব্বিদের সঙ্গে আলাপ করতে। আমাদের সঙ্গে তখন আলাপ চলছিল। এ সময় টঙ্গীর ময়দানে হামলা চালানো হয়।
এমনভাবে মেরেছে যেভাবে কোনো পশুকেও মারা হয় না। ঢাকা মেডিকেলে ৪০ জনের আহত রোগী মুমূর্ষু অবস্থায় আছে। আরও বিভিন্ন হাসপাতালে আহত অবস্থায় রয়েছে। সব মিলিয়ে ৪০০ জন সাথী আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।