ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় কুমিল্লার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে গেল শুক্রবার রাতে ইসরাত জাহান এরিন নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সড়কের এইচ.আর হাসপাতালের খণ্ডকালীন চিকিৎসক ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ডা. মারজান সুলতানা নিঝুমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে।
এদিকে, এ ঘটনার তদন্তে শনিবার (৯ নভেম্বর) কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. নাসিমা আকতার ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন। প্রসূতি ইসরাত জাহান এরিন জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের মোবারক হোসাইনের মেয়ে।
প্রসূতির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে ২০ বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী ইসমিত পাশা দিদারের সঙ্গে ইসরাত জাহান এরিনের বিয়ে হয়। এরই মধ্যে তিনি সন্তানসম্ভবা হন। প্রসব বেদনা উঠলে তাকে নগরীর এইচ.আর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বৃহস্পতিবার রাতে ডা. মারজান সুলতানা নিঝুমের তত্ত্বাবধানে তার সিজার অপারেশন হয়। কিন্তু শুক্রবার দুপুরেও এরিনের জ্ঞান ফেরেনি। এতে তাকে নগরীর ঝাউতলা এলাকার মুন হাসপাতালে নিয়ে ডা. নাসরিন আক্তার পপির অধীনে ভর্তি করা হয়।
ডা. নাসরিন আক্তার পপি সাংবাদিকদের জানান, ওই প্রসূতিকে অনেকটা মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়, তার পালস ছিল না এবং দেহের রঙ ছিল সাদা বর্ণের, রক্তশূন্য। আমি অপারেশনের স্থল রি-ওপেন করে দেড়শ থেকে ২শ’ এমএল পানি-মিশ্রিত জমাট রক্ত বের করি এবং দেহে রক্ত দেই। একপর্যায়ে রাত সোয়া ১১টার দিকে ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়। ডা. নাসরিন আক্তার পপি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এদিকে প্রসূতি মারা গেলেও তার নবজাতক শিশুটি সুস্থ আছে।
প্রসূতি এরিনের মামা হাসনাত ও স্বামী ইসমিত পাশা দিদার সাংবাদিকদের জানান, এইচ.আর হাসপাতালে ভুল অপারেশনের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে এরিনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে। শুক্রবার দুপুরেও জ্ঞান ফিরে না আসায় চিকিৎসক এরিনকে পার্শ্ববর্তী মুন হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রসূতি এরিনের বাবা মোবারক হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, তারা আমার মেয়ের নাড়ি কেটে ফেলেছে। আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সময় পার করেছে। তাদের ভুল চিকিৎসায় আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে ডা. মারজান সুলতানা নিঝুম সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসকের হাতে রোগীর মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ অপারেশনে আমাদের কোনো ভুল ছিল না। তদন্ত কমিটি হয়েছে বলে জেনেছি। তদন্তে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। এ বিষয়ে এর বেশি কিছু বলতে চাই না।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার বলেন, এ ঘটনার তদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মোহসিন-আরা কলিকে প্রধান করে এবং একজন এনেসথেসিয়া ও একজন মেডিকেল অফিসারকে সদস্য করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।