Thursday, March 20, 2025

ভ্যানে লাশ তোলার ভাইরাল ভিডিওতে আরও দুই পুলিশের পরিচয় শনাক্ত

আরও পড়ুন

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ একটি ভ্যানগাড়িতে স্তূপ করছে পুলিশ। ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। এবার সেই ভিডিওটিতে থাকা আরও দুই পুলিশ সদস্যের পরিচয় মিলেছে।

পরিচয় শনাক্ত হওয়া দুই পুলিশ সদস্য হলেন- আশুলিয়া থানার উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুল।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আশুলিয়া থানার উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুলের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় লোকজন। এ ছাড়া পুলিশের একটি সূত্রও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে।

ভাইরাল ওই ভিডিওতে একাধিক পুলিশ সদস্যকে দেখা গেলেও এ পর্যন্ত চার পুলিশ সদস্যের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন- ঢাকা উত্তরের গোয়েন্দা পুলিশের (তদন্ত) কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুল।

আরও পড়ুনঃ  কোটা আন্দোলন নিয়ে গুগলের ইঞ্জিনিয়ার সবুরের ফেসবুক স্ট্যাটাস

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ভিডিওতে ভ্যানের পাশ দিয়ে হেঁটে হেলমেট হাতে ও পুলিশের ভেস্ট পরা ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন। আরাফাতের পাশেই গাঢ় সবুজ রঙের একটি গেঞ্জি পরে ছিলেন ডিবির কনস্টেবল রেজাউল। এ সময় ওই ভিডিওতে থাকা আরও দু’জনের মধ্যে একজনকে দেখা যায় লাল হেলমেট হাতে পুলিশের ভেস্ট পরা আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় এবং মাথায় হেলমেট ও পুলিশের ভেস্ট পরা কনস্টেবল মুকুলকে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে আশুলিয়া থানা পুলিশের এক উপপরিদর্শক ওই দুই পুলিশ সদস্যের পরিচয় নিশ্চিত করেন।

তবে এ ঘটনায় ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, আমরা ঘটনাটি দেখেছি। চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুনঃ  সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে অশোভন আচরণ, ক্ষমা চাইলেন সেই তরুণী

গত ৩০ আগস্ট মরদেহ স্তূপাকারে জমা করা এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, দুজন পুলিশ সদস্যের একজন হাত ও একজন পা ধরে মরদেহ ভ্যানে নিক্ষেপ করছেন। এর আগেই ভ্যানে মরদেহ স্তূপ করে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন তারা। সর্বশেষ মরদেহটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। শেষে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতির দেখা মেলে। ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী ও ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার পাশে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি ড্রোন উড়িয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। তবে সেটি পুলিশের ড্রোন কিনা তা জানি না। থানার বিভিন্ন গলিতে ছাত্র-জনতা প্রবেশ করলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পুলিশ লাশগুলো তাদের থানার সামনে নিয়ে যায়। সেখানে একটি পুলিশভ্যানে লাশগুলো রেখে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ  পদোন্নতি পেলেন সেই সারোয়ার আলম

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা গত ৫ আগস্ট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন। পরে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হন। এসময় আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ১৫ জনের মৃত্যু হয় (ভ্যানে তোলা লাশের হিসাব বাদে)।

জানা গেছে, সাভার ও আশুলিয়ায় গত ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৭৫ জন। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন সাড়ে ৪ শতাধিক মানুষ। যাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।

সর্বশেষ সংবাদ