Thursday, March 20, 2025

চারপাশে পানি, রান্নাঘরের মেঝেতেই মাকে সমাহিত করলেন সুকুমার

আরও পড়ুন

ফেনীতে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার এবার এক হৃদয়বিদারক চিত্র উঠে এসেছে। বন্যা পরিস্থিতিতে চারদিকে থইথই পানি থাকায় সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের প্রিয়বালা বর্মণ নামে সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধাকে দাহ করতে না পারায় রান্নাঘরের মেঝেতেই সমাহিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ও মৃতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন প্রিয়বালা বর্মণ। গত ২১ আগস্ট সন্ধ্যার পর বন্যার পরিস্থিতির অবনতি হলে ঘরে পানি প্রবেশ করে। রাত বাড়ার সঙ্গে ঘরে পানিও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখনো মা প্রিয়বালাকে নিয়ে ছেলে সুকুমার চন্দ্র বর্মণ, তার স্ত্রী ও সন্তানরা ঘরে অবস্থান করছিলেন। একপর্যায়ে মাকে পানি থেকে বাঁচাতে ঘরের মধ্যে মাচা করে সেখানে রাখেন ছেলে। একরকম অনাহারে ছয় দিন কাটানোর পর মঙ্গলবার অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রিয়বালা। এক পর্যায়ে প্রিয়বালার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ছেলে সুকুমার একটি নৌকা ভাড়া করে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। রাস্তা থেকে মায়ের মরদেহ নিয়ে আবার ঘরে ফিরে আসেন সুকুমার। কিন্তু এলাকার চারদিকে তখনো থইথই পানি। স্থানীয় শ্মশানে দাহ করার মতো কোনো অবস্থা নেই। পরে কোনো উপায় না পেয়ে ঘরের মেঝেতেই মাকে সমাহিত করেন।

আরও পড়ুনঃ  ‘নবীর দেখানো পথে রাষ্ট্র উপহার দিতে চায় জামায়াত’

এ ব্যাপারে সুকুমার চন্দ্র বর্মণ বলেন, দর্জির কাজ করে সামান্য আয়ে অসুস্থ মা ও পরিবার নিয়ে কোনোমতে সংসার চলত। সেদিন মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে দেখি রান্নাঘর বাদে অন্য সব কক্ষে পায়ের পাতা পর্যন্ত পানি ছিল। পরে রান্নাঘরেই সমাধিস্থ করার জন্য মাটি খোঁড়া শুরু করি। একপর্যায়ে গর্তের মধ্যে পানি উঠা শুরু করে। একদিকে মাটি খুঁড়ছিলাম, আরেকদিকে আমার স্ত্রী পানি সেচে ফেলছিলেন। পরে কোনো রকমে মাকে সেখানে সমাহিত করেছি।

আরও পড়ুনঃ  সোনাতলায় সাবেক এমপিসহ আ.লীগের ২০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

সুকুমার আরও বলেন, এমন ভাগ্য কারো না হোক। কখনো এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে ভাবতে পারিনি। বন্যায় মরদেহ পানিতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা জানলেও কোনোভাবে সাহস করতে পারিনি। সেজন্যই পাকের ঘরের (রান্নাঘর) মেঝেতে সমাহিত করেছি।

সর্বশেষ সংবাদ