Friday, May 30, 2025

ড. ইউনূসকে সময় দিতে হবে

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ আমার-আপনার প্রিয় দেশ। আমাদের গর্বের, অহংকারের এ প্রিয় দেশটি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর উপলক্ষ গত ৫০ বছরে খুব বেশি পায়নি। আমরা যখন দেশের বাইরে যাই, ইমিগ্রেশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় শুধু বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও পরিচয়ের কারণে অনেক হেনস্তার মুখোমুখি হই। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যখন যাই, ওই দেশের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা অনেকে দেখবেন মানুষ হিসেবে আমাদের ন্যূনতম সম্মানটুকুও দেখায় না, বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় হয়রানি করে। সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যতিক্রম। লিওনেল মেসিও আমাদের ইউনূসের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য অপেক্ষা করে। আমাদের ইউনূসকে পৃথিবীর ১০টি প্রভাবশালী দেশ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়েছে। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬১টি সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। তিনি কত কত পুরস্কার, সম্মাননা পেয়েছেন, তার বর্ণনা করতে গেলে বড় আকারের কয়েকটা বই হয়ে যাবে। ড. ইউনূসের তত্ত্ব ও অবদান নিয়ে বর্ণনা করা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়, তার জন্য ভিন্ন একটি লেখার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লেখায় শুধু এটুকু বলি, তার ‘ক্ষুদ্রঋণ’ মডেল বিশ্বের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো না কোনোভাবে পড়ানো হয়। তার উদ্ভাবিত ‘সোশ্যাল বিজনেস’ মডেল কেন্দ্র করে বিশ্বের অন্তত ১০৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র বিভাগ বা একাডেমিক কার্যক্রম রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  জানা গেল বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের কারণ

নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূসের কাছে আমরা কোন বাংলাদেশকে এবং কোন সময়ে তুলে দিলাম? যে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে হওয়া বৈষম্য দূরীকরণেরে দাবিতে শিক্ষার্থীদের নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে জাতিসংঘের হিসেবে ৬৫০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, বেসরকারি হিসাবে যে সংখ্যা দুই হাজারের অধিক। আহত, পঙ্গু ও অন্ধ করা হয়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে। যে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে এ আন্দোলন, সেই কোটায় নিয়োগ কীভাবে হয় ও তার পরিণতি কী হয়, তার একটা উদাহরণ দিই। এ আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের রাতের অন্ধকারে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া, গুম করা ও অমানবিক নির্যাতন করার সবচেয়ে বড় অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, তিনি ‘ডিবি হারুন’ নামে পরিচিত। তার বাবা ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় আসেন ১৯৯৬ সালের পর। ১৬ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবারের প্রথম সারির অনেক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তার বাবা একজন ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’। তিনি দলীয় বিবেচনায় ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ কোটায় পুলিশে চাকরি পান। শুধু এ আন্দোলনেই নয়, চাকরি পাওয়ার পর থেকেই সরকারের কাছে নিজের বিশ্বস্ততা প্রমাণে তিনি প্রতিপক্ষকে দমন-নিপীড়ন করে আসছেন।

আরও পড়ুনঃ  ইসরায়েলে হামলা চালাতে ব্যাপক প্রস্তুতি লেবানিজ যোদ্ধাদের

আমরা এমন একটা বাংলাদেশকে আমাদের হিরো মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তুলে দিলাম, যেখানে শুধু সর্বশেষ সরকারের আমলে ব্যাংক খাত থেকে আত্মসাৎ হয়েছে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এ সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা ২০০৯ সালে ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। শুধু এ সময়ে সরকার ঋণ করেছে সাড়ে ১৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। যার উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারের ছত্রছায়ায় বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

আমরা এমন একটা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চাচ্ছি, যেখানে শুধু গত ১৫ বছরে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৬৯৯ জন। এ সময়ে গুম হন ৬৭৭ জন, কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন ১ হাজার ৪৮ জন। হামলা-মামলার সংখ্যা অগণিত।

আরও পড়ুনঃ  ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আবারও গর্জে উঠলেন এরদোয়ান

এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারদলীয় ক্যাডারদের অস্ত্রাগারে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করে একশ্রেণির দলবাজ শিক্ষক তৈরি হয়েছে। তাদের ছত্রছায়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে গিয়েছিল মেধাবী শিক্ষার্থীদের কাছে এক বিভীষিকার নাম। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের গিনিপিগ বানিয়ে পরীক্ষণের নাম করে বারবার শিক্ষা পদ্ধতির অপরিকল্পিত পরিবর্তন করে আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা তাকে ও তার সরকারকে বিতর্কিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে তাদের সব উইং চালু করে অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষকে এ সত্যটা বুঝতে হবে, আমরা চাইলেও মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে না। সব পর্যায়ের জুলুম, অবিচার, দুর্নীতি, অনাচার, বৈষম্য দূর করে ন্যায়ভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও প্রকৃতিবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠায় দরকার কাঠামোগত সংস্কার। প্রয়োজনীয় এ সংস্কারের জন্য বর্তমান সরকারকে সময় না দিলে আমাদের চারপাশে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসর ও আয়নাঘরের জনক-জননীরা আবার আমাদের জাহিলিয়াতের যুগে ফেরত নিয়ে যাবে।

লেখক: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সমাজ গবেষক

সর্বশেষ সংবাদ