Monday, July 28, 2025

৬৬ বছরের ‘নানা’ বিয়ে করলেন ২২ বছরের ‘নাতনিকে’

আরও পড়ুন

‘আইরিন ছোট থেকেই পড়াশোনায় অনেক ভালো। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় তার সঙ্গে আমার পরিচয়, আমাকে নানা বলে ডাকত। মেধাবী হওয়ায় তার পড়াশোনায় আমি অনেক সহায়তা করেছি। বড় হয়ে বিয়ের আলাপ শুরু হলে সে হুট করে আমাকেই বিয়ে করবে বলে জানায়। হতবাক আমি তাকে ভালো করে বোঝার সময় দিয়েছিলাম কিন্তু নাছোড়বান্দা মেয়েটি আমাকেই বিয়ে করবে। শেষ পর্যন্ত তাকে বিয়ে করেছি পরিবারের মতামতের ভিত্তিতে।’ কথাগুলো বলছিলেন ৬৬ বছর বয়সী শরিফুল ইসলাম। তিনি বিয়ে করেছেন কলেজ পড়ুয়া ২২ বছর বয়সী ‘নাতনি’ আইরিন আক্তারকে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌর এলাকার দক্ষিণ কোর্টতলি এলাকায় শরিফুলের বাড়ি। আর কনে আইরিন উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের নজরুল ইসলামের মেয়ে। গত ২২ মার্চ তাঁদের বিয়ে হয়।

আরও পড়ুনঃ  ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান

এ বিয়ের খবর-ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, কনে বেশে এক তরুণীকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন পাঞ্জাবি ও টুপি পরিহিত এক বৃদ্ধ। বিয়ের পর থেকেই জেলাজুড়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে ‘অসম’ এ বিয়ের খবর।

জানা গেছে, আইরিন আক্তারের সঙ্গে বৃদ্ধ শরিফুল ইসলামের দীর্ঘদিনের পরিচয়। আইরিন আক্তার টাঙ্গাইলের একটি নার্সিং কলেজে পড়াশোনা করেন। ওই ছাত্রীর দুলাভাইয়ের নানা শরিফুল। পরিচয়ের পর থেকেই আইরিনের পড়াশোনার সব খরচ বহন করছেন শরিফুল। নির্বিঘ্নে পড়াশোনা চালাতে ওই ব্যক্তি ছয় লাখ টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়েছেন বেশ আগে। সেই টাকার লভ্যাংশ দিয়েই পড়াশোনার খরচ চলে আইরিনের।

আরও পড়ুনঃ  ঝড়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড ফিলিপাইনে প্রাণহানি বেড়ে ১০০

প্রায় ১৫ বছর আগে শরিফুল ইসলামের স্ত্রী মারা যান। ফলে তখন থেকেই তিনি একা হয়ে পড়েন। তিনি এলাকায় কারও ‘দাদা’ আবার কারও ‘নানা’ হিসেবে পরিচিত।

এলাকার লোকজন জানান, আইরিনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। ফলে চতুর্থ শ্রেণি থেকেই তাঁর পড়াশোনার খরচ দিয়ে আসছেন বৃদ্ধ শরিফুল ইসলাম। আর সেসময় থেকেই তাঁদের সম্পর্ক অনেক ‘গাঢ়’।

জানতে চাইলে আইরিন আক্তার বলেন, ‘সম্পর্কে তিনি আমার নানা। পরিবারের অভাবের কারণে ছোট থেকেই তিনি আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে সহায়তা করে আসছেন। কিছুদিন আগে আমার পরিবার আমাকে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছিল। আমি ভেবে দেখেছি, অন্য কোথাও আমার বিয়ে হলেও আমার পড়াশোনা আর নাও হতে পারে। ফলে ভেবেচিন্তে আমি ওনাকেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই। এতে প্রথমে আমার বাবা রাজি ছিলেন না কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি আমাদের বিয়ে দিয়েছেন।’

আরও পড়ুনঃ  মতিয়া চৌধুরী আর নেই

শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু মেয়েটি আমাকে গ্রহণ করে নিয়েছে, সেখানে বয়স কোনো ব্যাপার না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অসম এ বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই নানা মানুষ নানা কথা বলছেন। কেউ হাসি-ঠাট্টা করছেন, কেউবা এ দম্পতিকে মন থেকে দোয়া করছেন।

‘কারও কোনো চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তে আমরা বিয়ে করিনি। জেনে-বুঝেই বিয়ে করেছি। এখন কে কী বললো সেটা আমার দেখার বিষয় না’- বলেন নববধূ আইরিন আক্তার।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ