Thursday, June 26, 2025

স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে এককক্ষে বসবাস : একজন কবরে, অন্যজন কারাগারে

আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম নগরের পোশাককর্মী জ্যোৎস্না বেগম হত্যাকাণ্ডের জট খুলেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটির চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের তদন্তে উঠে আসে স্বামী পরিচয় দিয়ে একসঙ্গে বসবাস করা এক পুরুষ সহকর্মীর হাতে খুন হন জ্যোৎস্না।

এ ঘটনায় রোববার (২৩ মার্চ) নগরের চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকা থেকে অভিযুক্ত নয়ন বড়ুয়াকে (২৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ (সোমবার) খুলশী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী জ্যোৎস্নার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাট নলুয়ার চর ভুঁইয়ার হাট এলাকায়। তার বাবার নাম আবুল কালাম। অভিযুক্ত নয়নের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পৌরসভা ১ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম গহিরা এলাকায়। তার বাবার নাম মিলন বড়ুয়া।

এর আগে, গত শনিবার (২২ মার্চ) নগরের খুলশী থানার লালখান বাজার মোড় এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে এক নারীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের কর্মকর্তারা ভুক্তভোগীর পরিচয় শনাক্ত করে। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্ত নয়নকে শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় রোববার (২৩ মার্চ) খুলশী থানায় ভুক্তভোগী জ্যোৎস্নার বড় বোন তৈয়বা বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশি নাগরিকের ওপর গুলির ঘটনায় তদন্ত টিম গঠন

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, ভুক্তভোগী জ্যোৎস্না এবং অভিযুক্ত নয়ন চান্দগাঁও থানার কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় অবস্থিত শিল্পগ্রুপ কেডিএসের মালিকানাধীন একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সেখানে উভয়ের মধ্যে পরিচয় হয়। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলেও বছরখানেক আগে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিন মাস আগে থেকে সেই সম্পর্ক আরও গভীর হয়। মাসখানেক আগে নয়ন-জোৎস্না নগরের ইপিজেড থানার বন্দরটিলা আয়েশা মায়ের গলির কামাল ম্যানসনের নিচতলায় একটি এককক্ষের বাসা ভাড়া নেয়। এরপর স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন। এ সময়ে উভয়ের মধ্যে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও হয়।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পিবিআই কর্মকর্তারা জানায়, জ্যোৎস্নার আগে স্বামী ছিল। নয়নের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আগের স্বামীকে তালাক দেন। এরপর নয়নকে স্বামী হিসেবে পেতে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে থাকেন। প্রয়োজনে নয়নকে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্যও বলেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের রাউজান এলাকায় আগে থেকে স্ত্রী-সন্তান থাকায় নয়ন তার প্রেমিকা জোৎস্নাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, জ্যোৎস্না বিয়ের জন্য চাপ দিলে উভয়ের মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ চলে আসছিল। বিয়ে না করলে জোৎস্না তার পুরুষ সহকর্মী নয়নকে মামলার হুমকিও দিয়েছিলেন। সম্প্রতি চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে জ্যোৎস্না রাউজান উপজেলায় নয়নের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেন। যদিও তিনি ওইসময় নয়নের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি ফাঁস করেননি। এরপর একাধিকবার সবকিছু ফাঁস করে দেওয়া এবং মামলার হুমকি দিতে থাকেন জ্যোৎস্না। এটি নিয়ে বিরোধ এবং বাকবিতণ্ডার জেরে শনিবার সকালে জ্যোৎস্নাকে গলাটিপে হত্যা করে নয়ন।

আরও পড়ুনঃ  ছিলেন অঞ্জনা সাহা, বিয়ের জন্য বদলেছিলেন ধর্ম

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর নয়ন তার প্রেমিকা জ্যোৎস্নার মরদেহ কম্বল মুড়িয়ে দড়ি ও ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলে। পরবর্তীতে মরদেহটি একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ঢুকায়। বস্তাবন্দি মরদেহটি প্রথমে রিকশাযোগে কিছুদূর নেয়। এরপর অটোরিকশাযোগে লালখান বাজার এলাকায় মরদেহটি ফেলে চলে যায়।

সর্বশেষ সংবাদ