গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে তৎকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাসহ অনেকে। দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তবর্তী সরকার।
তবে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য আসে রাজনৈতিক রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে। গতরাতে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে আবারো আলোচনায় আসে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ইস্যু।
এর পর থেকে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে একই সুরে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বেশ কয়েকটি পক্ষকে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন ব্যানারে বিক্ষোভ হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে।
জানা যায়, শুক্রবার জুমা নামাজের পর থেকে ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। সংগঠনটি আওয়ামী লীগ ও নৌকা প্রতীক দ্রুত নিষিদ্ধের দাবি জানায়। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এসে সমাবেশ করে।
জুমার নামাজের পর তারা কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিল শুরু করে রাজু ভাস্কর্যে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে মিছিলের সমাপ্তি টানে। এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দে’র ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে মিছিল নিয়ে এসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে মিছিল করে শিক্ষার্থীদের একটি দল। এদিন একই দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে গণঅধিকার পরিষদ।
এ ছাড়া শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণ ও গণহত্যার বিচার দাবিতে পোস্ট করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দুই মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে। একই বিষয়ে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটওয়ারীসহ আরো বেশ কয়েকজনকে কথা বলতে দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ইস্যুতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। জামায়াত আমির তার পোস্টে বলেন, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বস্তরের জনগণকে সংযত, সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থেকে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্যাতিত ১৮ কোটি মানুষের দাবি, গণহত্যাকারীদের বিচার, ২৪-এর শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসন, আহত এবং পঙ্গু অসংখ্য ছাত্র, তরুণ, যুবক ও মুক্তিকামী মানুষের সুচিকিৎসা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ১৫ বছরের সৃষ্ট জঞ্জালগুলোর মৌলিক সংস্কার সাধন করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এ সময় জনগণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই গণহত্যার বিচারটাই দেখতে চায়। এর বাহিরে অন্য কিছু ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের গত ১৭ তারিখের একটি বক্তব্য একাধিকবার পোস্ট করা হয়েছে। যেখানে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কবর রচনা করে গেছে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার অনুমতি দিবে না।
এদিন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুথানে পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ের পর এদেশে এক নবদিগন্তের সূচনা হয়েছিলো। ২০১৭ সালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দল হিসাবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে সোচ্চার থেকেছে। বিএনপির নেতৃত্বে হাসিনা পতনের একদফা দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলন করেছে এনডিএম। জুলাই গণঅভ্যুথানেও আমরা রাজপথে রক্ত ঝড়িয়েছি।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর নতুনভাবে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে দল হিসাবে আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে অভিযোগ দায়ের করে এনডিএম। একইসাথে আমরা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বিচারও চেয়েছি। দুঃখজনক হলেও সত্য, নতুন খসড়া আইনে এই ট্রাইবুনাল কর্তৃক সংগঠনের বিচার করার এখতিয়ার দেয়া হয় নাই। তবে আমাদের লড়াই থেমে যায় নাই। আমাদের কথা পরিষ্কার, বাংলাদেশের পবিত্র জমিনে অগনিত ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক কর্মী, আলেম-ওলামা, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকদের রক্ত ঝড়ানো আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে না। আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার যেকোনো ‘প্রকল্প’ আমরা রক্তের বিনিময়ে রুখে দিব ইনশাআল্লাহ।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে করার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ। তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের সকল শক্তি যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে কোনো বাধা থাকবে না।’ আজ শুক্রবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ আহ্বান জানান জুনায়েদ। তিনি ওই পোস্টে বলেন, আমি বিএনপি, জামায়াতসহ সকল রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।