Monday, August 18, 2025

‘দুনিয়ায় এমন কেউ কি নাই, যে আমার বুকের গুলিটা বাইর কইরা নিবো?

আরও পড়ুন

আমার বুকের যন্ত্রণা আর সইতে পারছি না। আল্লাহর দুনিয়ায় এমন কেউ কি নাই, যে আমার বুকের গুলিটা বাইর কইরা নিব? আমি কি এমন কইরই কবরে চইলা যামু? কথাগুলো বলছিলেন উত্তাল জুলাইয়ে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়া ভোলার ২৬ বছর বয়সী যুবক আব্দুর রহিম। বাড়িতে প্যান্ট-শার্ট পরা অচেনা কোনো লোকজন আসতে দেখলেই রহিমের মনে হয় সরকার বুঝি চিকিৎসা করাতে লোক পাঠিয়েছে।

আবদুর রহিম ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের হত দরিদ্র বাসিন্দা ছালাউদ্দিন আখন্দ ও মা রাসিদা বেগমের ছেলে। রহিম চার ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়। সে স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছে। বিয়ে করেছেন দুই বছর আগে। তার একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  অ্যাডভোকেট সাইফুলের জানাজায় হাসনাত-সারজিস

রহিম এক বছর আগে জীবিকার তাগিদে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে চাকুরি নেন তিনি। থাকতেন নর্দা এলাকার একটি মেসে। বেশ কিছুদিন যাবৎ তার চোখের সমস্যার কারণে শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজধানী ঢাকা উত্তাল। গত ১৯ জুলাই ছাত্র, জনতা ও পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর নর্দা বসুন্ধরা এলাকা। এদিন দুপুরে রহিম ওষুধ কেনার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেস থেকে নর্দা বাজারের দিকে রওয়ানা হন। এসময় তার সামনেই শুরু হয় ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গুলি বর্ষণ।

রহিম আত্মরক্ষার জন্য এদিক-সেদিক দৌড়াতে থাকেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। হঠাৎ একটি গুলি এসে তার বুকের ডান দিকে ঢুকে ফুসফুসে আটকে পড়ে। স্থানীয়রা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয় তারা। কারণ সেদিন রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ছিল রোগীদের উপচে পড়া ভিড়।

আরও পড়ুনঃ  রাগে ফুঁসছে ছাত্র-জনতা, ভারতীয় পণ্য-মিডিয়া বর্জনের ডাক

ঘটনার দুই দিন পর গত ২১ জুলাই রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে রহিমের অপারেশন হলেও ডাক্তার তার বুক থেকে গুলি বের করতে বার্থ হন। টাকার অভাবে পরবর্তী চিকিৎসা করাতে না পেরে হাসপাতালের সিট ছেড়ে বুকের গুলি বুকে নিয়েই বাড়ি চলে আসতে বাধ্য হতে হয় হতভাগা আবদুর রহিমকে।

বর্তমানে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আবদুর রহিম বুকে গুলি নিয়ে বিছানায় কাতরে কাটাচ্ছেন দুর্বিষহ দিন। চিকিৎসার খরচ ও সংসার খরচ চালানোর মতো তার অন্য কোনো অবলম্বন নেই।

আরও পড়ুনঃ  আত্মপ্রকাশ করছে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল, নাম হতে পারে ‘জনশক্তি’

ডাক্তার বলেছেন, অপারেশনের মাধ্যমে রহিমের বুক থেকে গুলি বের করা সম্ভব হবে। কিন্তু এর জন্য মোটাদাগের অর্থ খরচ করতে হবে। এত টাকা কোথায় পাবেন হতদরিদ্র আবদুর রহিম? এমতাবস্থায় সমাজের বিত্তবানরাসহ সরকারের সাহায্য কামনা করেছেন বুকে গুলিবিদ্ধ আবদুর রহিমের পরিবার।

রহিমের মা রাসিদা বেগম জানান, সরকারের লোকেরা তার আহত ছেলে রহিমের সব তথ্য ও ভিডিও চিত্র নিলেও এখনও কোনো সহযোগিতা পাননি। তিনি বলেন, আমি সরকারের কাছে ভাতকাপড় চাই না। আমি আমার ছেলের অপারেশন চাই। আমার ছেলেটাকে সুস্থ দেখতে চাই।

সূত্র: বাসস

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ