Monday, June 2, 2025

বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় পুরুষ শূন্য গ্রাম

আরও পড়ুন

বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ নজরুল ইসলামের স্ত্রী হেনা আক্তার। সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় একটি লাঠি দিয়ে ভর করে হাঁটছেন। চোখের নিচের ডান কোনায় বড় একটি কাটা দাগ। ডান পায়ে মারধরের ব্যথায় ফুলে উঠছে। লাঠি ভর দেয়া ছাড়া হাঁটতে পারছেন না।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে হামলা ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগের শিকার শেখ নজরুল ইসলামের স্ত্রী হেনা আক্তার কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, পুলিশ-সেনাবাহিনী এসেও তাদের মালামাল ও ঘরবাড়ি রক্ষা করতে পারেনি। হামলাকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং প্রতিরোধ করেও কোন ফল হয়নি। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই সব কিছু পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে।

এর আগে গতকাল বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কুলিয়াাইড় গ্রামে ইউনিয়ন কমিটির পদে বিএনপি নেতা মুস্তাফিজুর রহমান ও শেখ রুহুল আমিন এরমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একই পরিবারের ৮ ভাইয়ের বাড়ি হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় নারী-শিশুসহ আহত হয় ১৫ জন। এর মধ্যে ৫জনকে খুলনা ও বাগেরহাটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পুরুষ শূন্য পুরা গ্রাম। বিএনপি নেতা মোস্তাফিজ গ্রুপের ভয়ে আহত বেশ কয়েকজন পুরুষ ও নারী হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না।

আরও পড়ুনঃ  চাঁমেক ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকসহ ৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি

সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখনো খড়কুটার গাদাসহ বিভিন্নস্থানে আগুনের ধোয়া আর কুন্ডলী। ভুক্তভোগী এসব পরিবার এখনও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। শুধু তাই নয় ঘরে আগুন দেয়ার সময় রুমা আক্তার, কারী আক্তার, ইয়াসমিন বেগমসহ আরও অনেক নারী আহত হয়েছেন। এসব ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের সময় ছোট গোলপাতা দিয়ে ছাউনি কাঠের ঘর, মোটরসাইকেল আসবাবপত্র লেপ তোষক, তৈজপত্রসহ ঘরের যাবতীয় সামগ্রী আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

আহতরা জানায়, তাদের পরনের কাপড় ছাড়া আর কোন কিছুই অক্ষত নেই। ছোট ছোট শিশুরা ভয়ে বারবার ডুকরে কেঁদে উঠছে। হামলার শিকার আহত হেনা আখতার বলেন, এক স্বৈরাচারকে তাড়িয়ে আমরা কি আরেক স্বৈরাচারের দিকে ধাবিত হচ্ছি? এখনই এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

আরও পড়ুনঃ  মুন্সীগঞ্জে ২ শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ গ্রেপ্তার

জানা যায়, বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা পর্যায়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই কমিটি গঠনের কাজ জোরেশোরে চলছে। নেতাকর্মীরা বেশ আগ্রহ নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কমিটি গঠনে অংশগ্রহণ করছে। গত ৫ আগস্টের পরে বাগেরহাটে এমন নারকীয় ঘটনা এই প্রথম। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কুলিয়া দার গ্রাম এখন একটি আতঙ্কের নাম। দল মত নির্বিশেষে বাগেরহাটের সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তারা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন দলের কাছে এবং প্রশাসনের কাছে এর বিচারও দাবি করেছেন অনেকে।

আরও পড়ুনঃ  দু’পক্ষের সমঝোতা না হলে ইজতেমার অনুমতি বাতিল বিশ্ব ইজতেমা

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সমর নায়ক এমএ সালাম জানান, বিএনপিতে কোন গ্রুপ নাই এলাকাবাসী তাদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।

জেলার পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ জানান, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে ফের সংঘর্ষে আশঙ্কায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ