Monday, August 18, 2025

ভারতে দুর্নীতি উন্মোচন করা ‘সাহসী’ সাংবাদিকের লাশ মিলল সেপটিক ট্যাঙ্কে

আরও পড়ুন

‘সাহসী’ সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ভারতের ছত্তিসগড়ের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মুকেশ চন্দ্রকর। একের পর এক চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশ করে নজর কেড়েছিলেন অনেকের। প্রভাবশালীদের দুর্নীতির খবর প্রকাশই কি কাল হলো সাংবাদিক মুকেশের! যে কারণে হয়তো ‘নৃশংসভাবে’ হত্যার শিকার হতে হলো তাকে। খবর বিবিসির।

সম্প্রতি ১২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে দুর্নীতির খবর ফাঁস করেছিলেন মুকেশ চন্দ্রকর। প্রশ্ন উঠেছে, এই তথ্য সামনে আনার জন্যই কি খুন হতে হলো তাকে?

গত শুক্রবার ছত্তিসগড়ের বিজাপুর জেলার একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে মুকেশের মরদেহ উদ্ধার হয়। তার মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় পুরো ছত্তিসগড়ে। এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মুকেশের পরিচিত ও ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ভয়ডর ছিল না তার। বেশ কয়েকবার তার ওপর হামলাও হয়। কিন্তু এরপরেও সত্য উদ্ঘাটনের খোঁজে ছুটে গেছেন বার বার। বিজাপুর, বস্তার জেলার অনেক দুর্নীতি ও অপরাধের পর্দা ফাঁস করেছেন। আর এই নির্ভীক সাংবাদিকতার জন্য বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছিলেন মুকেশ।

আরও পড়ুনঃ  নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে

সাংবাদিকতায় আসার পর মুকেশ বলেছিলেন, বস্তারের এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যেগুলো সংবাদমাধ্যমগুলোতে কাটছাঁট করে দেখানো হয়। তাই এলাকার বিভিন্ন পরিস্থিতির ‘আনকাট’ ছবি তুলে ধরতে নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেলও খোলেন মুকেশ। নাম দেন ‘বস্তার জংশন’। দেড় লাখ সাবস্ক্রাইবার ছিল সেই চ্যানেলের।

জানা গেছে, মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না মুকেশের। ২০০৫ সালে বিজাপুরে বাসাগুড়া গ্রামে চলে আসেন তারা। সেখানে তখন দশম শ্রেণি পাশ করাই অনেক বড় বিষয় ছিল। অল্প বয়সেই মাকে হারান মুকেশ। মায়ের মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন দুই ভাই।

মুকেশের এক পরিচিত জানান, সংসার টানতে গ্যারাজেও কাজ করতে হয়েছে তাকে। খবু কাছ থেকে এলাকার সমস্যাগুলো দেখার পর, ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে আনতে সাংবাদিকতার পথ বেছে নেন। মুকেশের দাদা যুকেশও পেশায় সাংবাদিক।

আরও পড়ুনঃ  ফরিদপুরে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ৫ যাত্রী নিহত

স্থানীয় সূত্রের খবর, কোনো নতুন খবর করলেই মুকেশ এলাকার লোকজনদের ডেকে জিজ্ঞাসা করতেন, ঠিক হয়েছে কি না। বিজাপুর ও বস্তার চিনতেন হাতের তালুর মতো। বছর দুই-তিনেক আগে রাওঘাট প্রকল্প নিয়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে দুষ্কৃতিদের হামলার শিকার হন মুকেশ।

বস্তার জেলার মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে খবর করেছিলেন মুকেশ। গঙ্গালুর থেকে হিরোলি পর্যন্ত একটি রাস্তা নির্মাণের জন্য টেন্ডার হয়েছিল ৫০ কোটি টাকার। কিন্তু, পরে সেই নির্মাণ খরচ ১২০ কোটি টাকায় পৌঁছে যায়। রাস্তা নির্মাণের ঠিকাদার সুরেশ চন্দ্রকরের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার।

শনিবার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে। এর মধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত রীতেশ চন্দ্রকর মুকেশের চাচাতো ভাই। এছাড়া দীনেশ চন্দ্রকর নামে আরও এক আত্মীয় ও মহেন্দ্র রামতেক নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ছত্তিসগড় পুলিশ।

আরও পড়ুনঃ  আজহারীর আগমন উপলক্ষ্যে পটুয়াখালীতে প্রস্তুত হচ্ছে ৮ মাঠ

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন চন্দ্রকর তার ভাই রীতেশ ও মহেন্দ্র রামটেকের সঙ্গে সুরেশ চন্দ্রকরের বাড়িতে নৈশভোজ করেছিলেন। সেই সময়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। রীতেশ ও মহেন্দ্র লোহার রড দিয়ে আক্রমণ করে মুকেশকে। হত্যার পরে সাংবাদিকে দেহ একটি সেপটিক ট্যাঙ্কে লুকিয়ে রেখে সিমেন্ট দিয়ে ট্যাঙ্কের মুখ জমিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে, মুকেশের এই হত্যাকাণ্ডে দেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া। একটি বিবৃতিতে সব সাংবাদিক, বিশেষ করে- ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকায় কাজ করা সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে ভারতের সরকারকে মুকেশ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ