Thursday, May 1, 2025

ফেনীতে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতার সংবর্ধনায় ডিসি-পুলিশ সুপার, বিএনপি নেতারা

আরও পড়ুন

ফেনীতে কাতারস্থ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাখাওয়াত হোসেন খানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে শহরের একটি রেস্টুরেন্টে সরকারের বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে এ সংবর্ধনা দিয়েছেন আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন। এ নিয়ে জেলাজুড়ে নানা আলোচনা চলছে।

জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের এম সাখাওয়াত হোসেন খানের বাড়ি। ২০২৩ সালে কাতার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন তিনি। তার আগে থেকেই তিনি আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সম্প্রতি এম সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে এ সংবর্ধনা দিয়েছে আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এম সাখাওয়াত হোসেনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণসহ নানা চিত্র উঠে আসে। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

ফেসবুকে বেলাল হোসাইন নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের অর্থদাতা এম সাখাওয়াত হোসেন খান কাতারস্থ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। কাতারে তার বাসায় ফেনী পৌর মেয়রসহ কয়েকজন কমিশনার, যুবলীগের দায়িত্বশীল নেতা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের অবস্থান রয়েছে। আর আমরা তাঁকে সংবর্ধনা দিচ্ছি। কী জবাব দেবেন ৪ আগস্টের বীর শহীদদের? অর্থের কি ক্ষমতা।’

আরও পড়ুনঃ  সাবেক রেলমন্ত্রীর বিছানায় টাকার ছড়াছড়ি, খেলছে শিশুরা

জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রাসেল পাটোয়ারী এক পোস্টে মন্তব্য করেন, ‘টাকার কাছে সবাই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কিছু টাকার বিনিময়ে আওয়ামী পরিবারের লোককে সংবর্ধনা দিচ্ছে।’

আল ইমরান নামে আরেকজন লেখেন, ‘টাকার বিনিময়ে যদি আওয়ামী দোসররা সংবর্ধনা নেন আর ওই অনুষ্ঠানে আমাদের সিনিয়র নেতারা যায় তাহলে আমরা কোথায় যাব?’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে আমরা দাওয়াত পেয়েছি। কিন্তু আমরা যখন জানতে পেরেছি আওয়ামী লীগ নেতাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে তখন আমরা ওই অনুষ্ঠানে আর যাইনি। কিন্তু দেখলাম আমাদের নেতারাও গেছে। এসব অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে খোঁজখবর নিয়ে যাওয়া ভালো। দুঃখের বিষয় হলো আওয়ামী লীগ নেতার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন। উনাদের সেখানে খোঁজখবর না নিয়ে উপস্থিত হওয়াটা ঠিক হয়নি।’ কয়েকজন বলছেন, অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত হয়েছেন শুনে অনুষ্ঠানে তারাও গিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  জামালপুরে সমন্বয়ক পরিচয়ধারী ছাত্রলীগ নেতা আটক

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, ফেনীতে আলোকিত ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন ফাউন্ডেশন বৃত্তি প্রদান ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ ও সুবিধা গ্রহণ করে বিভিন্ন জনকে সংবর্ধনা দিয়ে থাকেন। যারা সংবর্ধনা দিচ্ছেন তারা কি কারণে দিচ্ছেন তা খোঁজ না নিয়ে এসব সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যাওয়া ঠিক না। যিনি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন তার অন্তত বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা উচিত ছিল। জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের এখানে আমন্ত্রণ করাটা ঠিক হলো কিনা? এখন বিতর্কিত করল।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল, জামায়াতের আমির মুফতি আবদুল হান্নান, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসএসআর মাসুদ রানা, ফেনী জেলা ব্যাংকার্স ফোরামের সভাপতি সামছুল করিম মজুমদার প্রমুখ।

এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেছেন, প্রবাসীদের বেশিরভাগ রেমিটেন্স বৈধ পথে আসে না। বৈধ পথে টাকা পাঠালে দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন সংবর্ধনার আয়োজন করায় ধন্যবাদ জানাই। মানুষ স্বীকৃতি না পেলে ভালো কাজে উৎসাহিত হয় না।

আরও পড়ুনঃ  হাসিনার বক্তব্যে অসন্তুষ্ট বাংলাদেশ, বার্তা পৌঁছে দিতে অনুরোধ

এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনীর অন্যতম প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল জুবায়ের বলেন, ‘এমন আয়োজন নিয়ে আমরা হতাশ। বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো না। যারা আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবে তারাও আওয়ামী লীগের দোসর। আওয়ামী লীগ নেতাকে সংবর্ধনা দেওয়া মানে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা। শুধু ফেনী নয়, এ দেশে যারাই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’

অনুষ্ঠানে অতিথি থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ‘আমি অনুষ্ঠানের ভেন্যুতে যাওয়ার পরপরই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত হন। ওই সময়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করা সম্ভব হয়নি। অনুষ্ঠানে আমি ছাড়াও সদর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আমান উদ্দিন কায়সার সাব্বির ও জেলা ছাত্রদল সভাপতি সালাউদ্দিন মামুনও উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ সংবাদ