গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা জোবায়ের ও মাওলানা সাদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও শতাধিক আহতের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে শূরায়ী নেজামপন্থী (জোবায়েরপন্থী) মাওলানা এসএম আলম হোসেন টঙ্গী পশ্চিম থানায় এ মামলা করেন। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মাওলানা জোবায়েরের অনুসারী ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, মামলায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও কয়েক শ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, উল্লেখিত আসামিরা মাওলানা সাদ কান্ধলাভীর অনুসারী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় বাধা দিয়ে ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেন তাঁরা। তাঁরা সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশে সরকারি সিদ্ধান্তবহির্ভূতভাবে ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানে সাদপন্থীদের জোড় করার মর্মে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেন।
সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, মামলার প্রধান আসামি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম তাঁর সই করা চিঠির মাধ্যমে সারা দেশের সাদপন্থীদের জানান, ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানেই পুরনোদের জোড় হবে। ওই চিঠিতে বলা হয়, পুরনো সাথিরা যেন সঙ্গে মোনাসেব সাথিদেরও নিয়ে আসে এবং তাদের সঙ্গে যেন টর্চলাইট ও হ্যান্ডমাইক থাকে। মামলার দুই নম্বর আসামি আব্দুল্লাহ মনসুর ফেসবুক লাইভে ঘোষণা দেন, পুরোনোদের জোড়ে এবং বিশ্ব ইজতেমায় যদি মাওলানা সাদ সাহেবকে আনতে দেওয়া না হয় আর তাদের যদি টঙ্গী ময়দানে ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর জোড় করতে দেওয়া না হয়, তাহলে তারা সরকারের সিদ্ধান্তমতে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব হতে দেবে না। তাদের এসব উসকানিমূলক বক্তব্য বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে ঘুমন্ত ও পাহারারত শুরায়ী নেজামের সাথিদের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দু গ্রামের মৃত ওসমান গণির ছেলে আমিনুল ইসলাম বাচ্চু (৬৫), ফরিদপুর সদর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মৃত শেখ সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৬০) এবং বগুড়া সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়া গ্রামের ওমর উদ্দিনের ছেলে তাজুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে।
এদিকে পুলিশের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ইজতেমা মাঠের বিভিন্ন স্থানে কিছু মুসল্লি অবস্থান করেছেন। তাদের দাবি, কাঁথা-বালিশসহ বিভিন্ন মালামাল পাহারা দিতে মাঠে রয়েছেন তারা। এ ছাড়া ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন। তবে মাঠের ভেতর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন স্টেশন রোডের মোড়, মুন্নু গেট-কামারপাড়া সড়ক, ইজতেমা মাঠে প্রবেশের ফটকসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছেন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এ সময় কিছু মুসল্লিদেরও বাঁশ হাতে নিয়ে ইজতেমা মাঠে প্রবেশের বিভিন্ন গেটে পাহারা দিতে দেখা গেছে।
মাঠে থাকা কয়েকজন মুসল্লি জানান, মাঠে অবস্থানকারীরা সবাই মাওলানা জোবায়ের অনুসারী। মাওলানা সাদ অনুসারীরা মাঠ খালি করে দেওয়ার পর গত বুধবার রাতের বিভিন্ন সময় তারা ইজতেমা মাঠে এসেছেন। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে মুরব্বিদের নির্দেশনা অনুযায়ী ইজতেমা ময়দানের যাবতীয় মালামাল পাহারা দিতে বিভিন্ন জামাতভুক্ত প্রায় পাঁচ শ সাথি মাঠে এসেছেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন জানান, বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুপক্ষের সভা শেষে মাঠে থাকা মালামাল পাহারা দেওয়ার জন্য জোবায়ের অনুসারীদের পাঁচ শ লোক থাকার সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা মাঠে অবস্থান করছেন। তবে পুলিশের নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে। মাঠ ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন।