জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ কোনো ইসলামি দল নয়- মন্তব্য করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘এক প্ল্যাটফর্মে’ আনার বিষয়ে জামায়াতের ভেতর ও বাইরে অন্যদের সঙ্গে যখন আলোচনা চলছে ঠিক তখনি তিনি এমন মন্তব্য করলেন।
এছাড়া জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও হেফাজতসহ ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে বৃহৎ ঐক্য প্রক্রিয়ার চেষ্টার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকও। জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের ঐক্যের গুঞ্জন ছড়ায় রাজনৈতিক মহলে। এমন পরিস্থিতিতে জামায়াতকে নিয়ে মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর নেতিবাচক মন্তব্য ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি ফেনীর মিজান ময়দানে হেফাজতের শানে রিসালাত সম্মেলনে হেফাজত আমির বলেন, ‘আমরা জামায়াতে ইসলামকে ইসলামি দল মনে করি না। জামায়াতে ইসলাম মদিনার ইসলাম চায় না, তারা মওদুদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়’।
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতে ইসলাম সব ভ্রান্ত ফেরকা সমূহের মধ্যে নিকৃষ্ট দল। এমনকি তারা কাদিয়ানি সম্প্রদায় থেকেও নিকৃষ্ট। কেননা জামায়াতে ইসলামের দ্বারা ইসলামের যে ক্ষতি হয়েছে, কাদিয়ানিদের দ্বারাও সে ক্ষতি হয়নি’।
হেফাজত আমিরের এ বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে পড়লে তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। অনেকেই মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে আওয়ামী লীগের ‘দালাল’ বলে তার পদত্যাগ দাবি করেন। কেউ মনে করছেন, তিনি ভারতের ষড়যন্ত্রে পা দিয়েছেন। তবে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য কাম্য নয় বলেও অনেকেই মত দেন।
এর আগে ২০২১ সালে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার শাসনামলে ‘আওয়ামী লীগ ২০০ বছর ক্ষমতায় থাকলেও আপত্তি নেই’ বলে মন্তব্য করেছিলেন হেফাজত আমির মহিবুল্লাহ। তার ওই বক্তব্যের স্ক্রিনশটও অনেকেই এখন ফেসবুকে শেয়ার করছেন।
জামায়াতকে নিয়ে হেফাজত আমিরের বক্তব্যের সমালোচনা করে আকাশ নামে এক ব্যক্তি তাকে আওয়ামী লীগের দালাল বলে সম্বোধন করেছেন।
নুরুল ইসলাম নামে একজন বলেছেন, ‘ইসলামি দলগুলোর মধ্যে এত মতপার্থক্য কাম্য নয়। এ দেশে যদি কোনোদিন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়, তা হবে জামায়াত ইসলামীর অবদানে। অন্য দল বিক্রিযোগ্য’।
রাজি বিল্লাহ লিখেছেন, ‘হুজুর ইন্ডিয়ার ‘র’ এর ষড়যন্ত্রে পা দিচ্ছেন মনে হয়’।
ইউসুফ খান বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের আমির হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন। অবিলম্বে তার পদত্যাগ চাই’।
এমএন খালেদ বলেন, সেক্যুলারপন্থি আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীদের ডোনেশন নিয়ে যাদের চলতে হয়, তাদের মুখ দিয়ে জামায়াতবিরোধী কথাবার্তা একটু বেশি শোনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাছাড়া বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা আত্মনিয়ন্ত্রণহীন’।
রাসেল আহমেদ বলেন, ‘হেফাজতের শোকরানা মাহফিল থেকে হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দিয়েছিল। সুতরাং জামায়াত ইসলামি দল না- এ বক্তব্য নিয়ে আমার মনে হয় জামায়াত ভাবে না’।
কাজি দেলয়ারুল আজিম বলেন, ‘মুহিবুল্লাহ সাহেবকে হেফাজত থেকে অপসারণ চাই। সারা বাংলাদেশের জনসাধারণের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।’
মহসিন মোহন বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে উনি (মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী) ইসলামিক দল মনে করেন। তাই ২০০ বছর ক্ষমতায় থাকার দোয়া করেছিল’।
কামরুল হাসান নামে এক নেটিজেন মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে আবদুল্লাহ বিন উবাইয়ের উত্তরসূরী বলে দাবি করেছেন।
মাসুম বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘ভারতীয় রুপি এবার মনে হয় পরিমাণ বেশি এসেছে’।
হুমায়ুন রশিদ রুবেল বলেন, ‘উনারা তো কওমি জননীর উত্তরসূরী। সুতরাং এসব বলবেই’।
এমএম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আপনারা পছন্দ না করলে কী হবে? এ দেশের লক্ষ কোটি তৌহিদি জনতা জামায়াতে ইসলামীকে ইসলামি দল হিসেবে পছন্দ করে। জামায়াতে ইসলামী দলের কী ভুল আছে, কুরআন-হাদিসের দলিল দিয়ে জাতির সামনে পেশ করুন। নয়তো জাতির সামনে তওবা করুন-এ সব অবান্তর কথা বলার জন্য’।
তবে নেটিজেনদের কেউ কেউ আবার হেফাজত আমিরের বক্তব্য সঠিক বলেন দাবি করেছেন।