Monday, June 2, 2025

মুক্তিযোদ্ধার অন্তিম সম্মান পেলেন না মতিয়া চৌধুরী

আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তবে দাফনের আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়া চৌধুরীর প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর কোনো আয়োজন ছিল না বলে জানিয়েছেন তাঁর ভাই মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে দুই দফা জানাজা শেষে মতিয়া চৌধুরীকে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর স্বামী বজলুর রহমানের কবরে শায়িত করা হয়।

মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মতিয়া চৌধুরী তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর পরিচয় সবাই জানে। কিন্তু তাঁকে কোনো গার্ড অব অনার জানানো হয়নি। কবরস্থানে দেখলাম কিছু পুলিশ ঘোরাঘুরি করছে। হয়তো এত লোকজন দেখেই তারা এসেছিল। কিন্তু তাঁকে গার্ড অব অনার দিতে কেউ আসেনি।’

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও মতিয়া চৌধুরীর ক্ষেত্রে তা হয়নি।

আরও পড়ুনঃ  বর্তমানে ছাত্রদের নেতৃত্ব দেওয়ার কেউ নেই

মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আজ সকাল ১০টার দিকে মরদেহ হাসপাতাল থেকে রমনায় তাঁর বাসভবনে নেওয়া হয়। সেখানে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হলে ভক্ত, অনুসারী ও স্বজনেরা ভিড় করেন। এখানে প্রথম জানাজা শেষে গুলশানের আজাদ মসজিদে দ্বিতীয় দফায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে মরদেহ মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাকে দাফন করা হয়।

মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মতিয়া চৌধুরীর কবরের জন্য জায়গা চেয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে আবেদন করা হয় গতকাল বেলা ১১টার দিকে। তারা আমাদের কথা শুনে জানাল, কবরস্থানে জায়গা দেওয়ার বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেখভাল করা হয়। তাঁরা সেখানে অনুমতির জন্য বলবেন। অনুমতি পাওয়া গেলে তাঁরাই আমাদের জানাবেন। কিন্তু আমরা সিটি করপোরেশনের কাছে থেকে কোনো সাড়া পাইনি। জায়গা না পাওয়ায় তাঁর স্বামী প্রয়াত সাংবাদিক বজলুর রহমানের কবরে তাঁকে দাফন করা হয়।’

আরও পড়ুনঃ  গুনে গুনে ঘুষ নেন অফিস সহকারী, ভিডিও ফাঁস

এর আগে বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিত মতিয়া চৌধুরী মারা যান।

মতিয়া চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় বামপন্থী রাজনীতি দিয়ে। তিনি ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়, তাতে মতিয়া চৌধুরী সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। আইয়ুব খানের আমলে চারবার কারাবরণ করেন। ১৯৬৫ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভূমিকার জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি মতিয়া চৌধুরীকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়।

আরও পড়ুনঃ  বিএনপি আমাকে ব্যবহার করেছে: রনি

মতিয়া চৌধুরীর জন্ম পিরোজপুরে, ১৯৪২ সালের ৩০ জুন। তাঁর বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মতিয়া চৌধুরী।

মতিয়া চৌধুরী শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসন থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মতিয়া চৌধুরী। ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে তিনি জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরও তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।

সর্বশেষ সংবাদ