Friday, January 10, 2025

‘পাখির মতো গুলি করে মানুষ মেরে এখন সাধু সাজেন’

আরও পড়ুন

পাখির মতো গুলি করে মানুষ মেরে এখন সাধু সাজেন’
লক্ষ্মীপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত চার শিক্ষার্থী হত্যা মামলার প্রধান আসামি, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপুর ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি পোস্ট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। সৌদি আরবে ওমরা হজ পালনকালে তোলা একটি ছবি দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘দোয়ার দরখাস্ত’।

শনিবার (১২ অক্টোবর) ফেসবুকে পোস্টটি দেন তিনি। তার এই পোস্ট নিয়ে গত দুই দিন ধরেই জেলাব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

সালাহ উদ্দিন টিপু জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি লক্ষ্মীপুরের আলোচিত প্রয়াত সাবেক পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের মেঝো ছেলে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চার শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় সদর থানায় পৃথক পৃথক দুটি মামলা, পুলিশ আহত মামলা ও এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধের ঘটনায় আদালতে মামলা হয়। সবগুলো মামলায় এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

গত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে গুলিবর্ষণ ও সহিংসতার পর পালিয়ে যান টিপু। এরপর কোথায় আত্মগোপনে ছিলেন, সে বিষয়ে এখনো আলোচনা থেমে নেই। এরই মধ্যে ঘটনার দুই মাস ৮ দিন পর নতুন করে আলোচনায় আসেন তিনি। এই প্রথম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নতুন করে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন টিপু।

আরও পড়ুনঃ  জামিন পাননি শিশু নূরীর মা

তার পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। রোববার (১৩ অক্টোবর) রাত ৯টা পর্যন্ত পোস্টটি ১৮০০ শেয়ার হয়েছে, মন্তব্য পড়েছে প্রায় ৮ হাজার। আর রিয়্যাক্ট হয়েছে ১৩ হাজারের বেশি। এতে নানা ধরনের মন্তব্য করেন নেটিজেনরা। তার ছবিতে অনেকেই মন্তব্য করেছেন ‘এটি পুরনো, নতুন করে ফেসবুকে ছাড়া হয়েছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য’। আবার ওই পোস্টের নিচে টিপুর অনুসারীরা তার জন্য দোয়াও চেয়েছেন।

টিপুর পোস্টে শাহাদাত হোসেন নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘পাখির মতো গুলি করে মানুষ মেরে এখন সাধু সাজেন। ’

ছবিতে মোল্লা রেদোয়ান বিন বেলাল নামে একজন লিখেছেন, ‘মানুষ হত্যা করে দোয়া চাইতে আসছে। আপনিতো প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন। ’

মো. ইদ্দিস মিয়াজি নামে একজন লিখেছেন, ‘আপনার হাতে রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে। বাংলার মাটিতে আপনার জায়গা হবে না। আপনার বিচার আল্লাহ অবশ্যই করবে। ’

রাকিবুল হাসান নকিব নামে একজন লেখেন, ‘দেশে আসেন ব্রো, সবগুলা গুলির হিসাব দিয়ে যাইয়েন। যতগুলা মা এর বুক খালি করছেন এগুলার হিসাব দিয়ে যাইয়েন। কীভাবে পারেন এসব আমার মাথায় আসে না। ’

মো. দিহান নামে একজন লেখেন, ‘খুনি টিপুকে এই বাংলার মাটিতে এনে বিচার করতে হবে। ’

আরও পড়ুনঃ  মেয়ের হেনস্তাকারীকে পিটিয়ে হত্যা করল বাবা

মো. আবুল হাসান নামে একজন লিখেছেন, ‘যার কাছে গুলি করে মানুষ মারার ক্ষমতা আছে, তার আবার দোয়া লাগে নাকি?’ রফিকুল ইসলাম নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘আল্লাহ আপনাকে ফাঁসির জন্য কবুল করুক’।

রায়হান নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘মানুষ মেরে ওমরাহ পালন, সৃষ্টিকর্তার সাথে দারুণ অভিনয়। ’ গাজী সাব্বির আহমেদ লিখেছেন, ‘পীর সাহেব, আপনি পালাইছেন কবে?’

এদিকে সাবেক যুবলীগ নেতা টিপুর অবস্থান এখনো কেউ নিশ্চিত নয়। তবে একটি গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে শনিবার (১২ অক্টোবর) তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন বলে দাবি করেন। কীভাবে দেশ থেকে পালিয়ে সৌদি আরবে যান, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানাতে চাননি তিনি।

অন্যদিকে ছাত্র আন্দোলনে নিহত এবং আহতের বিষয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ওই গণমাধ্যমকে টিপু বলেন, ‘ছাত্রদের ওপর আমি গুলি করিনি। গুলি করেছি ওপরের দিকে। আত্মরক্ষার্থে ও পরিবার-পরিজনকে হেফাজতের জন্য লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে গুলি করেছি। হত্যার সঙ্গেও আমি জড়িত নই। রাজনৈতিকভাবে আমি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছি, এ কারণে দলের ভেতরের ও বাইরের লোকজন অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। ’

আরও পড়ুনঃ  প্রয়োজনে শুক্রবারেও স্কুল খোলা রাখা হবে : শিক্ষামন্ত্রী

গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লক্ষ্মীপুরে রণক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। ওইদিন সকালে জেলা শহরের মাদাম এলাকায় এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হয়। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে সাদ আল আফনান পাটওয়ারী নামে এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ছাত্র-জনতার পাল্টা প্রতিরোধে পিছু হটেন টিপু ও তার সহযোগীরা। পরে জেলা শহরের তমিজ মার্কেটে থাকা টিপুর বাসভবনের উপর থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন টিপু ও তার সহযোগীরা। এতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন রাসেল, কাউছার হোসেন ও ওসমান গণি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন প্রায় দুই শতাধিক।

টিপু নিজেই একটি শর্টগান দিয়ে গুলি ছোড়েন, যার একটি ভিডিও চিত্র তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা টিপুর বাসভবন ঘেরাও করে অগ্নিসংযোগ করেন। সেখান থেকে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনোমতে পালিয়ে রক্ষা পান টিপু। ওই দিন গভীর রাতে টিপুর বাসভবনের ছাদ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টিপুর ২৭ জন সহযোগীকে উদ্ধার করে। এ ছাড়া তার বাসার সামনে থেকে ৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এরা জনতার গণপিটুনিতে মারা যান। এর আগে ২ আগস্ট অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন টিপুর গাড়িচালক মো. রাসেল।

সর্বশেষ সংবাদ