মৌলভীবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন এক ইউপি চেয়ারম্যান। এদিকে গ্রেপ্তারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ছড়িয়ে পড়া তাঁর ভিডিও বার্তা নিয়ে চলছে তোলপাড়।
একটি সূত্রের দাবি, ফেসবুকে লাইভে এসে নিজের গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য জানান তিনি, যা প্রমাণ করা এই লাইভ ভিডিও বার্তা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ফেসবুকে প্রচার হয়েছে। তবে এর কিছু সময় পরই তাঁর সেই লাইভ ভিডিও বার্তাটি সরিয়ে ফেলা হয়। শুক্রবার রাতে জেলার রাজনগরের কামারচাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানকে শ্রীমঙ্গল রেলক্রসিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে শনিবার তাঁকে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, শনিবার দুপুরে পুলিশি হেফাজতে থাকা আতাউর রহমান লাইভে এসে এক ভিডিও বার্তায় নিজের গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে ইউনিয়নবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি মৌলভীবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের ছোট ভাই।
একজন গ্রেপ্তার আসামি কী করে পুলিশের হেফাজতে থেকে ফেসবুক লাইভে এসে ভিডিও বার্তা দিলেন– এমন প্রশ্নে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনার ঝড়।
র্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে তৎপরতার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তিনি পলাতক ছিলেন। শুক্রবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে র্যাতব-৯ শ্রীমঙ্গল কোম্পানির একটি দল শ্রীমঙ্গল রেলক্রসিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে আতাউরকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার র্যাব গ্রেপ্তার আসামিকে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে র্যাব-৯ শ্রীমঙ্গলের কোম্পানি কমান্ডার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরুন্নবী জানান, আতাউর চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের পর মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশের হাতে হস্তান্তরের পর শনিবার দুপুরে ওই ভিডিও বার্তায় গ্রেপ্তার চেয়ারম্যান আতাউর কামারচাক ইউনিয়নবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানের রাহিম। গতকাল রাত্রে আমি গ্রেপ্তার হইছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায়। কিন্তু আমি ছিলাম না। আপনারা সবাই আমার লাগি দোয়া করবায়। আমি দোষী না। তাই কামারচাক ইউনিয়ন ছাড়ছি না দেইখা আমি গ্রেপ্তার হইলাম। আসসালামু ওয়ালাইকুম।’ তাঁর এই ভিডিও বার্তা প্রচারের কিছু সময় পরই ফেসবুক থেকে মুছে ফেলা হয়।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি সারাদিন বাইরে ছিলেন। গ্রেপ্তার আসামির লাইভে এসে ভিডিও বার্তা দেওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তাঁর লাইভ ভিডিওর লিঙ্ক থাকলে ঘটনা যাচাই করে দেখা হবে। আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মৌলভীবাজার জজ আদালতের আইনজীবী রজন কান্তি অর্জুন সমকালকে বলেন, ‘পুলিশি তদন্ত শেষে আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের হেফাজতে থাকা আসামির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে আসা আইনসিদ্ধ নয়।’
মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, পুলিশ হেফাজতে লাইভে এসে কথা বলার সুযোগ নেই। গ্রেপ্তার হতে পারেন– এমন ধারণা থেকে গ্রেপ্তারের আগে ভিডিও করে হয়তো সেটি পরে প্রচার করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা পুলিশের ইতিবাচক ভূমিকাকে কলঙ্কিত করার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অপরদিকে রাজনগর থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ১০ অক্টোবর ভোরে ওই উপজেলার কামারচাক ইউপির এই চেয়ারম্যানের গুদাম থেকে প্রায় ১২ টন ভারতীয় অবৈধ চিনি উদ্ধার করা হয়।
