Saturday, June 28, 2025

দিনে চাঁদার বিপক্ষে মাইকিং, রাতে নিজেই চাঁদাবাজ

আরও পড়ুন

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে সাভার ও আমিনবাজার এলাকা দখল, চাঁদাবাজি, সহিংসতার এক নরকরাজ্যে পরিণত করেছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অনেকেই ভেবেছিলেন এই বুঝি স্বস্তি ফিরে এলো। তবে বাস্তবে তা ঘটেনি। বরং আওয়ামী লীগের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের হাতবদল হয়েছে। আর সেখানে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। হেমায়েতপুর-আমিনবাজার এলাকায় আবির্ভাব হয়েছে নতুন ‘সম্রাট’ মোশারফ হোসেন মুশার। একসময় আওয়ামী লীগ ঘেঁষা এই নেতা রাতারাতি ভোল পাল্টে এখন বিএনপি নেতা সাজার চেষ্টা করছেন। এলাকায় শুরু করেছেন দখল-চাঁদাবাজি।

জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে সাভারের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা হেমায়েতপুরের ফুটপাত, ভ্রাম্যমাণ দোকান, কুলিবিট, বাসস্ট্যান্ড, বাজারঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ কমিটি, গার্মেন্টস ঝুট, হাউজিং ব্যবসাগুলো দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন মুশার বিরুদ্ধে। এই মোশারফ হোসেন মুশা ও তার পাঁচ ভাই মিলে পুরো এলাকার দখল নিয়েছেন বলে অভিযোগ। তারা এক মাসের মধ্যেই নিজস্ব বাহিনী দিয়ে একাধিক তাণ্ডব চালিয়েছেন বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুনঃ  ইসলামী আমিরাতের তিন বছর, কেমন আছে আফগানিস্তান

এলাকাবাসী জানান, সম্প্রতি একটি দখলের ঘটনায় বাধা দিতে গিয়ে মুশার লোকজনের হাতে বেধড়ক মারধরের শিকার হন এস আলম পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার হাসমত, আরিফ, ফিড ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম, মেহেদি ও আব্দুল মজিদ। পরে তারা সবাই হাসপাতালে ভর্তি হন।

মেহেদি হাসান। আগে আওয়ামী লীগের আনিস আহমেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বর্জ্য পরিচ্ছন্নতার কাজের নিয়ন্ত্রণ এখন রাসেল, রাকিব, শরিফ ও মোশারফের হাতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোশারফ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীব ও তার ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানো কে এই তরুণ

বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আলী কালবেলাকে বলেন, মুশা আমাদের ইউনিয়ন থেকে ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মৃত সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি কাউকে কোনো টাকা দেননি। মৃত মানুষদের টাকা তিনি খেয়ে বসে আছেন। এ পর্যন্ত ১৬৯ জন মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও তিনি কাউকে কোনো টাকা দেননি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সাধারণ সভার মাধ্যমে আমরা তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিই। তিনি এখন বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের কেউ নন। দুর্নীতির দায়ে দুই-তিন দিনের মধ্যে তাকে আমরা পূর্ণাঙ্গ বহিষ্কার করব।

আরও পড়ুনঃ  বিচারপতি মানিকের দখলে ৯০০ কোটি টাকার জমি

এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন বাসাবাড়িতে মোশারফের নেতৃত্বে লুটতরাজের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মুশার অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং দখলবাজি-চাঁদাবাজিতে অনেকটা অসহায় স্থানীয়রা। স্থানীয়দের দাবি, মুশার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে তাকে শাস্তির আওতায় আনার।

এসব বিষয়ে মোশারফ হোসেন মুশা বলেন, আমি কারও দখলবাজির দায় নেব না। আমি কোনো চাঁদাবাজি ও দখলবাজির সঙ্গে জড়িত নই। চাঁদাবাজি বন্ধে আমি মাইকিং করেছি।

সর্বশেষ সংবাদ