Wednesday, March 19, 2025

নামাজে গিয়ে সাইমন মায়ের কোলে ফিরল রক্তভেজা শরীরে

আরও পড়ুন

প্রতিদিনই এশার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাওয়ার সময় বলে যায়। এদিনও মসজিদে গিয়েছে। কিন্তু মায়ের কাছে বলে যায়নি। তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি এলাকাতেও। রাত ৮টার পরে লোকজন বাসার সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু রুক্তভেজা শরীরে। এভাবে ১৬ বছর বয়সী কিশোর ছেলে হত্যার বর্ননা দিলেন ২০ সেপ্টেম্বর রাতে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার মকিমাবাদ বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত কিশোর সাইমনের মা বিউটি আক্তার।

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার মিঠানিয়া ব্রিজ সংলগ্ন একটি ৫ তলা ভবনে সাইমনদের ভাড়া বাসায় কথা হয় তার মা-বাবার সঙ্গে।

এদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাইমনের গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের দিকদাই গ্রামের সরদার বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। সেখান থেকেই বাবা-মা বাসায় আসেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা খুবই শোকাহত এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেক অনুরোধে কথা বললেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।

বিউটি আক্তার বলেন, স্বপ্ন ছিল ছেলে কুরআনের হাফেজ হবে। যে কারণে গত দুই বছর আগে এলাকার সাউদুল কুরআন হিফজ মাদরাসায় ভর্তি করাই। সেখানে হিফজ বিভাগে পড়াশুনা করত সাইমন। ঘটনার দিন শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আমার ছেলে খুব আনন্দ উল্লাস করছিল। তখন বাসার প্রতিবেশীরা বলছিল সাইমন খুব দুষ্টামি করে, তার কোনো বিপদ হতে পারে। কিন্তু এসব আমি কিছুই মনে করিনি। পরক্ষণে সত্যি সত্যি আমি ছেলেকে হারিয়ে ফেললাম। আর কোনোদিন সাইমন আমাকে মা বলে ডাকবে না।

আরও পড়ুনঃ  গলায় ফাঁস নেয়ার টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে প্রাণ গেল মেঘলার

তিনি বলেন, সাইমনের বয়স যখন ৯ বছর। তখন তার বাবা সাইফুল ইসলাম আমাদের ছেড়ে চলে যান। তিনি অন্যত্র বিয়ে করেন। আমার সঙ্গে ডিভোর্স হয়। ওই বয়সে সাইমনকে নিয়ে আমি বাপের বাড়িতে চলে আসি। গত ৩ বছর আগে মো. ইউনুছের সঙ্গে বিয়ে হয় আমার।

ইউনুছদের বাড়ি সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চরবাকিলা গ্রামে। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে হাজীগঞ্জের এই বাসায় ভাড়া থাকেন এই দম্পত্তি। ইউনুছ রাজমিস্ত্রি কাজ করে সংসার চালান এবং ছেলের পড়ার খরচ বহন করতেন।

আবারও কান্নাজড়িত কন্ঠে বিউটি বলেন, গত ৭ বছর আমার ছেলের খোঁজ নেয়নি তার জন্মদাতা সাইফুল ইসলাম। আমি মানুষের বাসায় কাজ করে ছেলেকে লালন পালন করেছি। আমার স্বপ্নই ছিল ছেলে হাফেজ ও আলেম হবে। আমরা সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। আমার মা-বাবা নেই। আমরা ৫ বোন। আমার কোনো ভাই নেই।

আরও পড়ুনঃ  আইফোন কিনে বন্ধুদের ট্রিট না দেওয়ায় ছুরিকাঘাতে হত্যা!

সাইমনের বর্তমান বাবা ইউনুছ বলেন, সাইমুন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়তে আসে। আমিও সেখানে এশার নামাজ আদায় করতে যাই। ৪ রাকাত নামাজ শেষে একজন পরিচিত ব্যক্তি ফোন দিয়ে জানালো সংঘর্ষে সাইমন আহত হয়েছেন। তখন দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মাঝে অনেক কষ্ট করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাই। সেখান থেকে কুমিল্লা রেফার করে। রাতেই কুমিল্লা থেকে পাঠায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ৭টায় সাইমন মারা যায়। সেখানে হাসপাতালের খরচ আসে সব মিলিয়ে প্রায় ৭২ হাজার টাকা। অভাবের সংসারে আমাদের সামর্থ না থাকায় এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে আসি।

তিনি আরও বলেন, রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাইমনের মরদেহ ঢাকার হাসপাতাল থেকে নিয়ে হাজীগঞ্জ থানায় আসলে ময়নাতদন্তের জন্য দুপুরে চাঁদপুর মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ দিকদাইর সরদার বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে সাইমনকে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  পিরোজপুরে প্রাইভেটকার খালে পড়ে শিশুসহ নিহত ৮

ইউনুছ হত্যার ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, তখন বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষ চলছিল। নামাজ শেষে বাসায় আসার জন্য সাইমন বড় মসজিদের গেটের সামনে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। অনেক্ষণ অপেক্ষার পর বাসায় রওয়ানা দিলে সন্ত্রাসীরা তাকে পেছন দিক থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা ও পিঠে কোপ দেয়। তলপেটে আঘাত করে ছিদ্র করে দেয়। তখন সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। ওই অবস্থায় লোকজন আমাকে ফোন দিয়ে জানায়।

এদিকে সাইমন হত্যার ঘটনায় জনৈক সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি মামা পরিচয়ে হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক। তিনি বলেন, মামলায় ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

এদিকে সাইমন হত্যার বিষয়ে মা-বাবা কেউই কোনো মামলা করেননি নিশ্চিত করে তার মা বিউটি আক্তার দাবী করেন তার কোনো ভাই নেই।বাবা ইউনুছ বলেন, আমরা ওসিকে জানিয়েছি এই ঘটনায় আমরা কোনো মামলা করবো না।

সর্বশেষ সংবাদ