Saturday, June 28, 2025

শ্বাসনালিতে গুলি, খেতে পারছে না স্কুলছাত্র আফফান

আরও পড়ুন

বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আয়শুল ইসলাম আফফান। প্রায় দেড়শ ছোররা গুলির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয় তার শরীর। এর মধ্যে কিছু গুলি বের করা গেলেও এখনো ১২০টির মতো গুলি শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে। শ্বাসনালিতে কয়েকটি গুলি আটকে আছে। শ্বাসনালিতে গুলি আটকে থাকায় বিষয়টি জটিল হতে পারে। সে কিছু খেতে পারছে না।

ডাক্তাররা জানিয়েছেন, এর জন্য চার বছরের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন। আর শ্বাসনালির গুলি অপসারণের জন্য দেশের বাইরে নেওয়া দরকার। ডাক্তাররা এ মাসের ৩০ তারিখে আবার হাসপাতালে যেতে বলেছেন। বর্তমানে বাড়িতে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে আফফান।

আফফান বগুড়া করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। আফফানের বাবা কামরুল ইসলাম প্রবাসে থাকেন। যমজ সন্তান নিয়ে মা আয়েশা ছিদ্দিকা বগুড়ার উপশহরে থাকেন। যমজ ভাই দুজনই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আফফানের আরেক ভাইয়ের নাম অজাইরুল ইসলাম অরোয়া।

আন্দোলনের দিনগুলোতে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরলেও বিজয়ের দিনে পুলিশের ছোররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার পুরো শরীর। গত ১৮ জুলাই মিছিলে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শরিক হয় আইসুল ইসলাম আফফান। এরপর ৩ ও ৪ আগস্টও আন্দোলনে যোগ দেয় সে। কয়েকদিন মিছিল শেষে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যায়। বাবা সৌদিপ্রবাসী হওয়ায় মা আরও কঠোর নজর রাখতেন সন্তানদের প্রতি। মা বাড়ি থেকে বের হতে দেবে না এমন ইঙ্গিত পাওয়ার পর শহরের ফুলবাড়ির নানাবাড়িতে যায় আফফান।

আরও পড়ুনঃ  আ.লীগ থেকে পদত্যাগ করলেন হাবিব মীর

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাড়িতে এসে কাউকে না জানিয়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর থানা মোড় পার হতেই পুলিশ থানা থেকে জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। খুব কাছ থেকে গুলি করায় তার শরীরে প্রায় ১৩০টি গুলি বিঁধে যায়। একসময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে সে। আর কিছু বলতে পারে না আফফান।

তার মা আয়েশা সিদ্দিকা জানান, ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে তিনি প্রায় বেহুঁশ ছিলেন। ছেলেকে খুঁজতে চলে যান শহরে। ছেলের সারা শরীর রক্তাক্ত দেখতে পান। যেখানে যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছে সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে প্রথমে নেওয়া হয় কাছেই বগুড়া ডায়াবেটিক হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তারা অন্য স্থানে নেন। সেখান থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে বিভিন্নভাবে এক্সরে করে দেখা যায়, তার সারা শরীরে ১৩০টির বেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে অপারেশনের মাধ্যমে কয়েকটি গুলি বের করা হলেও আরও ১২০টির মতো গুলি শরীরে রয়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

তিনি আরও জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সিটি স্ক্যান করে দেখা যায়, শ্বাসনালিতে কয়েকটি গুলি আটকে আছে। শ্বাসনালিতে গুলি আটকে থাকায় বিষয়টি জটিল হতে পারে। সে কিছু খেতে পারছে না। ডাক্তারা জানিয়েছেন এর জন্য চার বছরের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন। আর শ্বাসনালির গুলি অপসারণের জন্য দেশের বাইরে নেওয়া দরকার। ডাক্তাররা এ মাসের ৩০ তারিখে আবার যেতে বলেছেন।

তিনি বলেন, সরকারে পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলা হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নিজেরাই লাখ টাকার বেশি ব্যয় করে এ পর্যন্ত চিকিৎসা করিয়েছেন। তারা আর চিকিৎসা ব্যয় ভার বহন করতে পারছেন না। ঢাকা থেকে একজন সমন্বয়ক কথা বললেও চিকিৎসার ভার কেউ নিচ্ছেন না।

আরও পড়ুনঃ  বিএনপিকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করল আ.লীগের কর্মীরা

তিনি চিকিৎসার সহায়তা চেয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর, জেলা পরিষদ, সিভিল সার্জন এবং জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন। এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাননি। এ অবস্থায় মা-ছেলে অসহায় হয়ে পড়েছেন। এক মাসের বেশি সময় হলো ছেলে অসুস্থ।

তিনি জানান, ছেলের বাম হাতে সবচেয়ে বেশি গুলি লেগেছে। মাঝে মাঝে তার বাম হাত অবশ হয়ে যায়। ঠিকমতো কিছু ধরতে পারে না। তার বাবা প্রবাসী হওয়ায় তাকে সব সামাল দিতে হচ্ছে। তিনি সন্তানের সুচিকিৎসার জন্য বর্তমান সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ জানান, আমরা সাধ্যমতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসহ সব ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। যারা মোটামুটি সুস্থ হয়েছে, তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া মাঝেমধ্যে ফলোআপ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ সংবাদ