Monday, August 18, 2025

বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত তোফাজ্জল

আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের গণপিটুনিতে নিহত মাসুদ কামাল তোফাজ্জলের জানাজা শেষে বরগুনার পাথরঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মা-বাবা আর ভাইয়ের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শা‌য়িত হলেন তিনি।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় স্থানীয় মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শোকে কাতর এলাকাবাসী এই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

স্থানীয়রা বলেন, তোফাজ্জল খুবই হাস্যরসিক লোক ছিল। তাকে আমরা কখনই কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও সবার সঙ্গেই হাসিমুখে কথা বলতেন তিনি। আমরা এই মৃত্যুকে কোনোভাবেই মানতে পারছি না। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ একটা বিদ্যাপীঠে এমন নৃশংস একটা ঘটনা ঘটবে ভাবতেও পারিনি। ও যদিও চুরি করে না তবুও যদি করেও থাকত এ জন্য আইন রয়েছে। সামান্য কয়েক টাকার মোবাইলের জন্য একটা জীবনকে এভাবে চলে যেতে হবে তা মানা যায় না।

আরও পড়ুনঃ  এজলাসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ড. আব্দুর রাজ্জাক

জানাজায় অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, রাতে ঘুমাতে পারিনি, শুধু চোখের সামনে ভাত খাবার দৃশ্য ভেসে উঠে। তোফাজ্জল আমার কোনো নিকট আত্মীয় নয় তবুও ওর জন্য মায়া লাগে। এ রকম একটা কাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে তা ভাবা যায় না।

তোফাজ্জলের স্কুলশিক্ষক মিলন মিয়া জানান, স্কুল জীবন থেকেই তোফাজ্জল খুব মেধাবী এবং শান্ত স্বভাবের ছিল। ও সবসময় শিক্ষক এবং বড়দের সম্মান করত। আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই এবং তার সঙ্গে যারা তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন করেছেন তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

আরও পড়ুনঃ  গার্মেন্টস কর্মীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১

এ বিষয়ে তার মামাতো বোন তানিয়া জানান, আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। তারা পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করে দোষ এড়ানোর জন্য মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করলে মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

এর আগে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। পরে কয়েক দফায় মারধর করা রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যায় হলে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিল। এমন সময় হঠাৎ তোফাজ্জল নামে যুবক হলে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা দুপুরে ছয়টি মোবাইল চুরির ঘটনার চোর সন্দেহে মূল ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে তাকে মারধর ও জেরা করতে থাকে। একপর্যায়ে, তাকে নিয়ে হল ক্যানটিনে খাওয়ানো হয়। এরপর এক্সটেনশন ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বুক, পিঠ, হাত ও পায়ে ব্যাপক মারধর করেন একদল শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুনঃ  আবু সাঈদের বাড়িতে ড. ইউনূস

মারধরের ফলে ওই যুককের পা থেকে রক্ত বের হতে থাকে। এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে ফের মূল ভবনের অতিথিকক্ষে নিয়ে মারধর করা হয়। এরপর ১০টার দিকে প্রক্টোরিয়াল মোবাইল টিমের সদস্যরা এলে মারধরকারীরা তাকে তাদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে কিছু শিক্ষার্থী ও কয়েকজন হাউস টিউটরের সহায়তায় তাকে প্রথমে শাহবাগ থানায় এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ