Sunday, June 1, 2025

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবেন ড. ইউনূস, এ জন্যই কি বৈঠকে মোদির অনীহা?

আরও পড়ুন

জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশন শুরু হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। ওই সময় মোদির সঙ্গে সাইডলাইনে বৈঠক হতে পারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। তবে, তাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এতটা আগ্রহী নন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এর কারণ কী? দুই দেশের সম্পর্কই‑বা কোন পথে যাচ্ছে?

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক এখন তলানিতে। এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকেরা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই বিরূপ সম্পর্কের শুরু। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনমতে, বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। তাঁকে দেশে আনার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক বার্তাই দিয়েছে। তবে, ভারত তাঁকে ফেরত দেবে কিনা, সেটি বড় প্রশ্ন।

এর মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের কথা চলছে। তবে, এতে মোদি তেমন আগ্রহী নন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, বৈঠকে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করার ব্যাপারে আলোচনা উঠতে পারে। এ ছাড়া সীমান্ত হত্যা নিয়েও আলাপ হতে পারে। এ জন্যই মোদি বৈঠক করতে চাচ্ছেন না।

শেখ হাসিনাকে কি দেশে আনা যাবে, ভারতের সাথে চুক্তি কী বলছে?শেখ হাসিনাকে কি দেশে আনা যাবে, ভারতের সাথে চুক্তি কী বলছে?

এ ব্যাপারে ওয়াশিংটনের দ্য উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, ‘দুজনের আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতে পারে শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান। মোদি যদি বৈঠক করেনই, তাহলে এই ইস্যুর সামনে পড়তেই হবে। তিনি চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারবেন না।’

আরও পড়ুনঃ  আওয়ামী লীগ এর দোষোর ওসি নিজাম কে জনগণ ধরে গণধু'লায় দিলো...

যদিও এর আগে গত মাসে মোদির সঙ্গে ফোনালাপ হয় ড. ইউনূসের। ওই সময় বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে মোদিকে আশ্বাস দেন প্রধান উপদেষ্টা। ওই সময় শেখ হাসিনাকে নিয়ে কথা হয়নি। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গত রোববার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বৈঠকের ব্যাপারে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাস্তায় ব্যাপক আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন দমাতে মাঠে নামে আইন‑শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট বলছে, জুলাই ও আগস্টের ৫ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিক্ষোভে ৬ শতাধিক নিহত হয়েছে। সেসব হত্যাকাণ্ডের জেরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।

প্রতিবেশির সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের জন্য দায়ী মোদিপ্রতিবেশির সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের জন্য দায়ী মোদি
শেষমেশ ওই আন্দোলন পরিণত হয় সরকার পতনের দাবিতে জনবিক্ষোভে। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাস্তায় নেমে আনন্দ-উল্লাস করে ছাত্র-জনতা। ৮ আগস্ট দেশের দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এর মধ্যেই শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়ে আসছে ছাত্র-জনতা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রোববার জানায়, বিচারের মুখোমুখি করতে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে প্রত্যর্পণ করার চেষ্টা করছে তারা।

সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল শেখ হাসিনা কিছুদিন ভারতে থেকে এরপর অন্য কোনো দেশে চলে যাবেন। কিন্তু যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কোনো সুযোগ এখনো পাননি। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতেও (ইউএই) যাওয়ার পথ খোলেনি।

আরও পড়ুনঃ  আপনারা আর চাননি, তাই পদত্যাগ করেছি: শেখ হাসিনা

যত দ্রুত বৈঠক করা যায়, ভারতের জন্য ততই ভালো বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন। তিনি সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ২.০’ ভারতের পক্ষে যায়নি। কিন্তু বাস্তবতা মেনে নিয়েই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে তাদের। ড. ইউনূসের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে এই বাস্তবতার স্বীকৃতি দেওয়াই উচিত হবে মোদির। এরপর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকেই হাঁটা উচিত তাঁর।

অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, একক রাজনৈতিক দলের মাধ্যমেই কেবল সম্পর্ক টিকে থাকে না। ভারতকে এই সত্যটা এখন মেনে নেওয়ার সময় এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারসাম্য না রেখে বিশ্বের পরাশক্তি হতে পারবে না ভারত।

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, শেখ হাসিনার সরকার টানা চারবার ক্ষমতায় থাকার সময় ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিল। রেল, সমুদ্র ও ডিজিটাল বিভাগে ভারতের সঙ্গে ১০টির বেশি চুক্তি করেছেন শেখ হাসিনা। তবে, ক্ষমতায় থাকার সময় গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বিরোধীদের কঠোর হস্তে দমন করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকি তাঁর সময়ের তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে। কিন্তু ভারত বরাবরই এসব নির্বাচনের ফলকে স্বাগত জানিয়ে আসছে। এ কারণে বাংলাদেশে প্রায়ই দেখা যায় ভারত বিরোধিতা।

আরও পড়ুনঃ  রাইসির দেহরক্ষীকে নিয়ে রহস্য দানা বাঁধছে

এ ব্যাপারে ইন্ডিয়াস অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো সোহিনি বোস বলেন, শেখ হাসিনার সময় দুই দেশের সম্পর্কটা ছিল পরস্পর নির্ভরশীলতার ওপর ভিত্তি করে। সেই বাস্তবতা কিন্তু এখনো পাল্টে যায়নি। এখনো দিল্লি-ঢাকা সম্পর্ক এই ভিত্তিতেই এগিয়ে যাওয়া উচিত। তবে, হয়তো দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। সম্পর্ক আগের জায়গায় নিয়ে যেতে হলে যোগাযোগ ও জ্বালানি প্রকল্পগুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে।

দুই দেশ গত নভেম্বরে তিনটি বড় প্রকল্প উদ্বোধন করে। এগুলো যোগাযোগ ও জ্বালানিভিত্তিক। এতে এক দেশ আরেক দেশের পাশে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেলপথ চালুর ঘোষণা আসে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এসব প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশে ভারত ‘পরাজিত’, চীন কি জিতেছে?বাংলাদেশে ভারত ‘পরাজিত’, চীন কি জিতেছে?
বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও কৌশলগত এই সম্পর্ক আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে বলেই মনে করছেন দ্য উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান। বিশেষ করে সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

বাণিজ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় অংশীদার বাংলাদেশ। যেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত হচ্ছে দ্বিতীয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। দুই দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্য হয়েছে দেড় হাজার কোটি ডলারের।

এবার এই বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে দুই দেশের রাষ্ট্রদূত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন বলে মনে করছেন মাইকেল কুগেলম্যান। তবে, স্বাভাবিক অবস্থা এত সহজে ফিরছে না। কেননা বাংলাদেশের রাজনীতি কোন পথে যেতে পারে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ সংবাদ