Friday, June 27, 2025

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত কী হবে আ.লীগের?

আরও পড়ুন

সরকারপ্রধানের পদ ত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার মধ্য দিয়ে আবারও বড় ধরনের সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলটি আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, তা নিয়েও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই সন্দিহান।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসীন হয় আওয়ামী লীগ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল পথভ্রষ্ট সেনা কর্মকর্তার হাতে নিহত হন বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য। সেই সময় কঠিন রাজনৈতিক সংকটে পড়েছিল আওয়ামী লীগ। ৪৯ বছর পর সেই আগস্ট মাসেই গণরোষে বাধ্য হয়ে ক্ষমতা ছেড়ে নতুন করে সংকটে পড়তে যাচ্ছে এই দলটি।

বিশ্লেষকরা বলেন, পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ থেকে দেশ মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে দেশের মানুষের মাঝে যে চেতনার বীজ বুনেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তার চূড়ান্ত ফল অর্জিত হয়। স্বাধীন দেশে শূন্যহাতে দেশ গড়ার কাজটি শুরু করলেও তা অসম্পূর্ণ থেকে যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক হত্যাকাণ্ডের কারণে। এর পরই আওয়ামী লীগের ওপর নেমে আসে রাজনৈতিক সংকট। সামরিক সরকারের হস্তক্ষেপে স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পায়। দল হিসেবে রাজনৈতিক সংকটের হাবুডুবু খেতে থাকে আওয়ামী লীগ। সারা দেশেই নির্যাতনের শিকার হন দলীয় নেতাকর্মীরা। ওই সংকট আরও ঘনীভূত হয় দল একাধিক ভাঙনের কবলে পড়ায়। সেই নাজুক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে দলের ১৩তম সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতেই সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে দলকে পুনর্গঠিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতায় ফেরান।

আরও পড়ুনঃ  শোকের মাসে আ.লীগ চায় ঘুরে দাঁড়াতে

বিশ্লেষকরা বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসীন হলেও তা সহজ ছিল না, পথ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। এই ক্ষমতায় আহরণের পূর্বে দলকে সংগঠিত করা, আওয়ামী লীগের বিভাজন দূর করে এক সুতোয় গাঁথা, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই আওয়ামী লীগে সুদিন ফিরে আসে। এই সুদিনের পথে আসতে দলকে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে লড়াই করতে হয়েছে। কিন্তু সেই সুদিন আওয়ামী লীগের ভাগ্য বেশিদিন টেকেনি, ২০০১ সালের ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংসদে আবারও বিরোধী দলে আসে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্যাতনের শিকার হন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, জীবন দিতে হয়েছে অন্তত ২৬ হাজার নেতাকর্মীর। সেই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে আওয়ামী লীগ আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে।

আরও পড়ুনঃ  সেই হিট অফিসার এখন কোথায়?

বিশ্লেষকরা বলেন, বিপুল ভোটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে দেশকে ডিজিটাল করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে। সব সূচকে এগিয়ে যেতে থাকে দেশ; কিন্তু গণতন্ত্রের সূচকে অগ্রগতি হয়নি দেশের; বরং নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ হতে পারে—এমন শঙ্কায় ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যরা অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে, যা নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনায় পড়ে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার।

বিশ্লেষকদের দাবি, আওয়ামী লীগ টানা চারবারের মতো ক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশের উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হলেও দলের অবস্থা সঙ্গিন থেকে সঙ্গিনতর হতে থাকে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দলের বিভিন্ন স্তরে নিয়মিত সম্মেলন না হওয়া, নানা কারণে ত্যাগী ও নিবেদিত কর্মীদের অভিমানে সরে যাওয়া, কমিটিতে হাইব্রিডদের প্রাধান্য, নেতৃত্ব নির্বাচনে আর্থিক লেনদেনের প্রবণতা, যোগ্যদের বঞ্চিত করা এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ ও স্বজনপ্রীতি অন্যতম প্রধান। এ ছাড়া গত চার মেয়াদে সরকারের দুর্নীতি, বিরোধী মতের মানুষকে দমন, অর্থ লোপাটসহ নানা কারণে মানুষের পূঞ্জীভূত ক্ষোভের ফলে জনপ্রিয়তা কমে আসে আওয়ামী লীগের। এমনকি দেশে-বিদেশে নানা চাপে পড়ে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর কোটাপ্রথা বিরোধী আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশত্যাগের মাধ্যমে আবারও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আরেক দফা বিপদে ফেলে গেলেন। দলের নেতাকর্মী ও বিশ্লেষকদের দাবি, আওয়ামী লীগ আরেকদফা রাজনৈতিক সংকটে পড়ল। এখন কী হবে আওয়ামী লীগের?

আরও পড়ুনঃ  সাবেক মন্ত্রীপুত্রের ‘ব্যক্তিগত পার্ক’ গুড়িয়ে দিল রেল বিভাগ

শত হতাশার মধ্যেও আওয়ামী লীগের অতীত ইতিহাস স্মরণ করে বিশ্লেষকরা বলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার আওয়ামী লীগের ইতিহাস আছে, ফিরে আসার সক্ষমতা রয়েছে। দলকে ভঙ্গুর অবস্থা থেকে টেনে তুলে ঐক্যবদ্ধ করে ক্ষমতায় নিয়ে আসার কারিগর ছিলেন শেখ হাসিনা, নতুন কে হবেন আওয়ামী লীগের ত্রাণকর্তা, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

সর্বশেষ সংবাদ