Saturday, July 26, 2025

বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না মামুনের

আরও পড়ুন

কৃষকের ঘরে আলোর প্রদীপ হয়ে জন্মেছিল তিতুমীর কলেজের মেধাবী ছাত্র মামুন। অভাবের সংসারে দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি পরিবারের অভাব ঘোঁচাতে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সারের কাজ করে ভালোই আয়-রোজগার হচ্ছিল তার। এ কাজ করে টাকা জমিয়ে উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছান তিনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার ভিসাও পেয়ে যান খুব সহজেই। আগামী ২২ আগস্ট মধ্য আমেরিকার দেশ ফিলিজে যাওয়ার কথা ছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! বিদেশের ভিসা রেখেই মামুন চলে গেলেন পরপারে।

বলছিলাম কোটা সংস্কার আন্দোলনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পরিবারের সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে চীর বিদায় নেওয়া স্বপ্নবাজ মামুনের কথা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের চরচিকন্দি এলাকার আব্দুল আব্দুল গণি মাদবর ও হেনা বেগম দম্পতির চার ছেলের মধ্যে সবার ছোট মামুন মিয়া (২৫)। ছোট বেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী কৃষক পরিবারের এই ছেলেটি। তার স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়া। ২০১৬ সালে স্থানীয় শৌলপাড়া মনোয়ার খান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৮ সালে শরীয়তপুর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজে ভর্তি হন। সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকোত্তরের পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতেন। নিজের খরচ যোগানোর পাশাপাশি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন পরিবারেরও। নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চাকরি নিয়ে ২২ আগস্ট মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজ যাওয়ার কথা ছিল তার। তবে তার স্বপ্ন যে অধরাই রয়ে গেল। বুলেটের আঘাতে নিভে গেল তার জীবন প্রদীপ।

আরও পড়ুনঃ  ফের উৎপাদনে ফিরেছে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র

প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ পারভেজ কালবেলাকে বলেন, আমি আর মামুনসহ বেশ কয়েকজন ঢাকার রামপুরার উলন ওয়াপদা রোড এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকি। ওইদিন রাতে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। তাই আমিসহ মামুনের কয়েক বন্ধু মিলে রাত ১২টার দিকে রাস্তায় হাঁটতে বের হই। একসময় মামুন হেঁটে গলির সম্মুখে চলে যায়। আর কিছুক্ষণ পর আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর একটি গাড়ি থেকে গুলি চালানো হয়। দৌড়ে পালাতে যাওয়ার সময় একটি গুলি মামুনের মাথায় লাগে। এরপর তাকে উদ্ধার করে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরের দিন শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। পরে বিষয়টি আমরা ফোন করে তার পরিবারকে জানাই।

আরও পড়ুনঃ  ‘গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে আমেরিকা বিভিন্ন দেশে অশান্তি লাগিয়ে রেখেছে’

সরেজমিনে গিয়ে নিহত মামুনের বাড়িতে দেখা যায়, বাড়ির উঠোন ভর্তি মানুষ। মা হেনা বেগম ঘরের বারান্দার একটি খুঁটি ধরে আহাজারি করছেন। তাকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে এসেছেন প্রতিবেশীরা। বাবা আব্দুল গণি মাদবর অসুস্থ। একটু কান্না করতেই আবার নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকেন।
আহাজারি করতে করতে মামুনের মা হেনা বেগম বলেন, আমার পোলায় কইছিল- মা আমার জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করিও, আমি যেন ভালোভাবে বিদেশ যাইতে পারি। আমি বিদেশ গিয়া টাকা পাঠাইলে তোমাদের সব কষ্ট শেষ হইয়া যাইবো। এহন দেহি ও আমাগোরে ফাঁকি দিয়া কবরে চইলা গেল।

মামুনের বড় ভাই রুবেল বলেন, মামুন অনেক মেধাবী ছিল। ও নিজের প্রচেষ্টায় এতদূর এসেছে। নিজে পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করে রোজগার করতো। ওর আয়ের ওপর আমাদের পরিবার নির্ভরশীল ছিল। এখন আমাদের পরিবারটা কীভাবে চলবে জানি না। আমার ভাইয়ের মতো এমন মৃত্যু যেন আর কারও না হয় সরকারের কাছে এটাই দাবি।

আরও পড়ুনঃ  গোপালগঞ্জে আ.লীগ নেতাসহ ৩৩০৬ জনকে আসামি করে সেনাবাহিনীর মামলা

মামুন মিয়ার প্রতিবেশী আল-আমিন বলেন, মামুন ভাইর ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি অনেক টান ছিল। তার আগ্রহ দেখে পরিবারের সবাই মিলে পড়াশোনা করায়। সে আমাদের এলাকার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সেকেন্ড পজিশন মার্ক পেয়ে এসএসসি পাশ করে। সে পড়াশোনা করে আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছিল। কয়েকদিনের মধ্যে তার আমেরিকায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। তার মৃত্যুতে পরিবারটি পথে বসে গেল।

শৌলপাড়া মনোয়ার খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোতালেব হোসেন বলেন, মামুন ছেলেটি মেধাবী ও ভদ্র ছিল। কয়েক দিন আগে আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তখন আমাকে জানায় ও কিছুদিনের মধ্যে বেলিজ যাচ্ছে। ওর এমন মৃত্যু আমাকে চরমভাবে ব্যথিত করেছে। আল্লাহ যেন ওর ভুলগুলো ক্ষমা করে জান্নাত দান করেন।

শৌলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান বলেন, ছেলেটি ওর সফলতার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিল। আর কিছুদিন পরে ওর পরিবারের হয়ত আর কষ্ট থাকতো না। এমন মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো না।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ