Wednesday, March 19, 2025

‘আমি স্বামীর কাছে আসব, নাকি সন্তানের কাছে যাবো?’

আরও পড়ুন

স্বামী হাসিম মোল্যার লাশ বাড়িতে আসলে এক হৃদয় বিদায়ক দৃশ্য অবতরণ হয়। স্বামীর লাশ দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্ত্রী রাজকী বেগম (৩৪)।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজকী বেগম বলেন, ‘আমার সামনেই ওরা (প্রতিপক্ষরা) আমার স্বামীর মাথায় কোপ দেয়, হাত কেটে ফেলে। আমি কইছি, আর মারিস না, আমার কথা শুনল না। পাশেই আমার সন্তানরেও ওরা কোপাইয়ে ফেলাই থুইছে। ওই সময় আমার কেয়ামত হয়ে যাচ্ছে। আমি স্বামীর কাছে আসব, নাকি সন্তানের কাছে যাবো। আমার ছেলের এক পায়ে তিনটে কোপ দিছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমার তিনটে ছেলে-মেয়ে এতিম হয়ে গেছে, আমার স্বামী হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই।’

এর আগে শনিবার সকালে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শিলিমপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুই পক্ষেরে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয়ে খুলনায় সিটি মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান স্বামী হাসিম মোল্যা (৩৮)। নিহত হাসিম মোল্যা ছিলিমপুর গ্রামের আব্দুল কাদের মোল্যার ছেলে।

আরও পড়ুনঃ  ভূমি অফিস যেন ঘুষের হাট, টাকা ছাড়া মেলে না সেবা

ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বিকেলে গ্রামের বাড়িতে হসিম মোল্যার মরদেহ এসে পৌঁছায়। আসরের নামাজ পর জানাজা শেষে স্থানীয় বাগমারা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের শিলিমপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত শনিবার(১৫ মার্চ) সকালে স্থানীয় ঠান্ডু মোল্যা ও জনি মোল্যা পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ১৩ জন এবং দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এসময় গুরুতর আহত জনি মোল্লা ও তার আপন ভাই হাসিম মোল্যাকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসিম মোল্যা মারা যান। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ওই এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। এসময় নিহতদের পক্ষের সিরাজ মোল্যা ও আজিজার শেখ নামে দুইজনকে একটি ওয়ান শুটার গান ও ২০ রাউন্ড গুলিসহ আটক করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  ডুবে গেছে পারিবারিক কবরস্থান, মরদেহ নিয়ে বিপাকে স্বজনরা

জানা গেছে, এলাকায় থমথমে এলাকার পরিবেশ। নিহতের প্রতিপক্ষ ঠান্ডু মোল্যা গ্রুপের কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানো হয়েছে। মরদেহ আসার খবরে আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয়রা ভিড় করেছেন হাসিম মোল্যাদের বাড়িতে। অঝোরে কাঁদছেন বৃদ্ধ মা জাহিদা বেগম। তার পাশেই কাঁদছেন হাসিম মোল্যার স্ত্রী রাজকী বেগম। রাজকী বেগমের অভিযোগ, বাড়ির পাশে আমার সামনেই এলাকার প্রতিপক্ষরা তাঁর স্বামী ও সন্তানকে কুপিয়েছিলেন, পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বামী মারা গেছেন।

নিহত হাসিম মোল্যার বোন নাজনীন আক্তার বলেন, ‘প্রতিপক্ষরা আমার এক ভাইয়ের হাত কেটে দেছে, ভাতিজাকে কুপিয়েছে। আমার আরেক ভাইকে খুন করিছে যারা, তাদের ফাঁসি চাই।’ বৃদ্ধ মা জাহিদা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে যারার হত্যা করেছে, আমি আমার সন্তান হত্যাকারীদের ফাঁসি চায়।

আরও পড়ুনঃ  নাটোরে প্রাণ অ্যাগ্রো কারখানা বন্ধ ঘোষণা

এদিকে হাসিম মোল্যা নিহতের পর থেকে প্রতিপক্ষ ঠান্ডু মোল্যা গ্রুপের লোকজন পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক। রোববার বিকেলে নিহত হাসিমের মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহতের পরিবার এখনো কোনো মামলা করেনি। তবে পুলিশকে মারধর এবং অস্ত্র ও গুলিসহ দুইজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে দুইটি মামলা করেছে।

সর্বশেষ সংবাদ