Saturday, June 28, 2025

ফারুকের ওপর হামলায় জড়িত আসামিদের জামিনদাতা বিচারকের পদত্যাগ দাবি

আরও পড়ুন

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নাগরিক সমাবেশে ফারুক হাসানের ওপর হামলায় জড়িত আসামিদের জামিনদাতা বিচারকের পদত্যাগ দাবি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন।

তিনি প্রশ্ন করেন, জামিন অযোগ্য ধারার মামলায় আসামিরা কিভাবে জামিন পেল?

শুক্রবার ফারুক হাসানকে দেখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গিয়ে তিনি এ দাবি করেন।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও তার সঙ্গে হাসপাতালে যান। এছাড়া তাকে দেখতে যান ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাৎ হোসেন সেলিম ও সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা।

এ সময় আমির খসরু আহত ফারুক হাসানের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। তিনি জানতে চান- ওই দিন কারা হামলা করেছিল। জবাবে রাশেদ খাঁন বলেন, সমাবেশে গণঅভ্যুত্থান পক্ষের লোক সেজে আওয়ামী লীগের লোকেরা হামলা চালিয়েছিল।

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমির খসরু বলেন, ফারুক হাসানের ওপর হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়, আরও নিন্দনীয় আসামিদের জামিন পাওয়া। ঘটনার পেছনে কারা আছে, সরকারের উচিত তদন্ত করে খতিয়ে দেখা। ফারুক হাসানের প্রতি দলের পক্ষ থেকে সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।

এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রাশেদ খাঁন বলেন, হাসিনার আমলে আমরা হামলার শিকার হয়েছি, বিচার পাইনি। এখনো যদি হামলার শিকার হই, বিচার না পাই তাহলে কোথায় পরিবর্তন হলো? আমরা এ ঘটনায় সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও শারমিন মুরশিদের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা পেয়েছি; কিন্তু এরপরও আসামিদের জামিন করাল কারা? তারা কি সরকারের থেকেও শক্তিশালী। আমরা বিচারকের পদত্যাগ দাবি করছি, তিনি কিভাবে, কোন গ্রাউন্ডে জামিন অযোগ্য মামলায় অপরাধীদের জামিন দিলেন?

আরও পড়ুনঃ  ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লাকী আক্তারকে গ্রেপ্তারের দাবি জবি শিক্ষার্থীদের

তিনি বলেন, আসামিরা কতটা মানসিকভাবে বিকারগস্ত যে, জামিনের পর দুধ দিয়ে গোসল করেছে। ঘটনার পেছনের রহস্য উদঘাটন করার আগেই আসামিদের জামিন প্রমাণ করে বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়নি। হাসিনার আমলের মতোই সবকিছু চলছে।

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, আমরা গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আছি। ফারুক হাসান আমাদের সহযোদ্ধা, হাসিনার পতনে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। তার ওপর হামলার বিচার না হওয়া দুঃখজনক।

এ সময় ফারুক হাসান বলেন, আসামিদের আমি তো ক্ষমা করিনি, তাহলে বিচারক কিভাবে ক্ষমা করে জামিন দিলেন? আমি আসামিদের গ্রেফতার দাবি করছি। আমার পায়ের লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি হাসপাতালে আর ওরা কিভাবে জামিনে মুক্ত?

উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারি শহিদ মিনারে জুলাইয়ের শহিদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে হামলার ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের নেতা ফারুক হাসানসহ জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের বেশ কয়েকজন আহত হন।

তবে হামলার পর ফেসবুক লাইভে এসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছিলেন ফারুক হাসান। পরে অবশ্য সেই ভিডিও মুছে ফেলেন তিনি। পরে হামলার জন্য জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নেতাকর্মীদের দায়ী করেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন।

হামলার পর ওইদিনই শাহবাগ থানায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়। ৬ জানুয়ারি ভোরে শরীফ মিজি ওরফে এসকে আবীর আহমেদ ওরফে শরীফ (২৭) ও মো. কোরবান শেখ হিল্লোলকে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশকে ভারতের গোলাম করে রাখার সেই চুক্তিতে কি ছিল?

পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক প্রশান্ত কুমার সাহা আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনের পর আসামিরা দুধ দিয়ে গোসলও করেন।

এদিকে হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক খোমেনী ইহসান। শুধু তাই নয়, ওই সমাবেশে শহিদ পরিবারের সদস্যদের না যাওয়ার জন্য ফোন করেন সারজিস। ওই ফোনের একটি রেকর্ড অন্তর্বর্তী সরকারকেও দেওয়া হয়।

হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশের পর পুলিশ মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফ ও কোরবান শেখ হিল্লোলকে গ্রেফতার করে; কিন্তু গ্রেফতারের ১১ ঘণ্টার মাথায় তাদের জামিন দেন আদালত। এ মামলার অপর দুই আসামি সাইফুল ইসলাম ও তন্ময়কে এখনো গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

অপরদিকে হামলার পরদিন ৫ জানুয়ারি হামলাকারীরা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের দোতলায় সংবাদ সম্মেলন করে। সেই সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য শহিদ মিনারে হামলার নেতৃত্বে থাকা আসামি মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফের সঙ্গে সাংবাদিকদের যোগাযোগের অনুরোধ করেন সারজিস। ‘জুলাই মুভমেন্ট জার্নালিস্ট’ নামক হোয়াটসআপ গ্রুপে সারজিসের শেয়ার করা ওই পোস্টটি মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেন হামলাকারী আবীর আহমেদ শরীফ। এসব কারণে শহিদ মিনারে হামলায় সারজিস জড়িত কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়ায়ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ও সারজিসের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি মুখ খুলতে শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। শহিদের তালিকায় নাম ওঠাতে হয়রানির শিকার, শহিদ পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া এবং আহতদের যথার্থ চিকিৎসা সহায়তা না পাওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুনঃ  সম্পদের হিসাব দিতে হবে উপদেষ্টাদেরও : নীতিমালা জারি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ পরিবারের সদস্যদের সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে গঠিত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর কার্যক্রম ও ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলমের ভূমিকা নিয়ে গত বুধবার প্রথম প্রশ্ন তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশীদ। নিজের ফেসবুক ওয়ালে সারজিসকে উদ্দেশ করে তিনি লেখেন- ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনকে এক সপ্তাহের মাঝে ফাংশনাল করুন। অন্যথায় আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বস্তরের জনগণ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।’ শুধু তাই নয়, জুলাই ফাউন্ডেশনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবি জানান এই সমন্বয়ক।

রিফাতের পোস্টের পর থেকে সারজিসকে নিয়ে ফেসবুকে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব থেকে সারজিসকে অব্যাহতি দেওয়ার জোর দাবি জানান।

Previous article
Next article
আজ শুক্রবার জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় মাসব্যাপী লিফলেট বিতরণ উদ্ভোবনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আবদুস সালাম। ছবি : এনটিভি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে শুধু দলের নয়, পুরো দেশের দায়িত্ব নেবেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জিয়া মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম। আজ শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় মাসব্যাপী লিফলেট বিতরণ উদ্ভোবনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুস সালাম এসব কথা বলেন। আবদুস সালাম বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর মানুষ গণতন্ত্রের স্বাদ পায়নি। দেশের মানুষ নির্যাতিত-নিপীড়িত ছিল। আওয়ামী দুঃশাসনের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারেনি। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সব কিছু ধ্বংস করেছে। তাই আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় আসে, আবার সবকিছু ধ্বংস করবে। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেবে। আজকে যারা নির্বাচন পেছাতে চায় তারা আবারও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে চায় কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে আবদুস সালাম বলেন, আজকে দেশ সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। আর আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে ৩১ দফার মধ্যমে দেশের সব কিছু সংস্কারের কথা অনেক আগেই বলে দিয়েছি। আপনারা দেশের সংস্কারের কথা বলছেন? বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংস্কারের উদাহরণ হলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান যে সংস্কার করেছেন, বাংলাদেশে ওই সংস্কার আর কেউ করতে পারবে না। আবদুস সালাম আরও বলেন, আজকে শেখ হাসিনা বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো অবস্থান করছে। তাই আপনাদেরকে যার যার এলাকায় সুসংগঠিত হতে হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে আপনাদের বলতে চাই, বিএনপি সব সময় আপনাদের সাথে আছে। আবদুস সালাম বলেন, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে, মোহাম্মদপুরে অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। সেই বীরদের আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আমরা গত ১৭ বছরে অনেক নেতা-কর্মী হারিয়েছি। অনেকে আহত হয়েছে। আমাদের যুবদলের নেতা রফিককে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছিল। সে সব ঘটনা আমরা ভুলে যাই নাই। তাই আমরা আওয়ামী দোসরদের বলতে চাই, আর মাঠে নামার চেষ্টা করিয়েন না। এবার আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। ইনশাআল্লাহ্, জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। যারা সীমান্তের ওপারে বসে ষড়যন্ত্র করছেন, তারা কী সীমান্তের এপারে আসতে পারবে? এবার আর ভারতে বসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানানো যাবে না, হওয়াও যাবে না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ ইকবাল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি যুগ্ম-আহ্বায়ক হাজী ইউসুফ, মহিলা দলের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট রুনা লায়লা, জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জামাল হোসেনসহ মোহাম্মদপুর, আদাবর এবং শেরেবাংলা নগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সর্বশেষ সংবাদ